বেড়েই চলেছে মৃত্যু মিছিল। এক দিকে যেমন বাড়ছে কারখানার মুনাফার হার তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শ্রমিকের মৃত্যুর হার। সে ঠিকা শ্রমিকই হোক বা স্থায়ী শ্রমিক। মৃত্যুর হাত থেকে পড়ছে না কেউই। দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানাতেই দিন কয়েকের মধ্যে মৃত্যু হল বেশ কয়েকজন শ্রমিকের।
গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার একজন শ্রমিক আবার এই কারখানাতে কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে ঝলসে গিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। সেই ঘটনার রেশ কাটার পূর্বেই বৃহস্পতিবার মধ্য রাতের বেলা ভয়ানকভাবে মৃত্যু হল এক স্থায়ী শ্রমিকের। এই কারখানার র’ মেটেরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্লান্ড (RMHP ) এর ওল্ড সাইডের অপারেশন বিভাগের সহযোগী আশুতোষ ঘোষালের (৫৪) মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
কারখানা সুত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল নাইট সিফটে কাজ করার সময় আশুতোষবাবু কোনোভাবে চলন্ত কনভেয়ার বেল্টের উপর পরে যান। সঙ্গে সঙ্গে টুকরো হয়ে যায় তাঁর মৃতদেহ। দুর্ঘটনার প্রায় দু'ঘন্টা পর তাঁর খন্ড খন্ড দেহ উদ্ধার হয়। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানা গিয়েছে, বি-জোনের ২বি/৫০ বঙ্কিম চন্দ্র অ্যাভিন্যুয়ের বাসিন্দা ছিলেন। পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে আছেন। দিন কয়েক পরে আশুতোষবাবুর ছেলের বিবাহ ছিল। তার পূর্বেই এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আগত আশুতোষবাবুর পরিবার সহ কর্মচারী মহলে।
পাশাপাশি এ ঘটনায় মারাত্মক ক্ষোভের সঞ্চার হয় শ্রমিক মহলে। রাতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ঘটনার প্রতিবাদ জানান। বারবার বারবার এই রকম ঘটনা ঘটেই চলেছে এ কারখানায়। কর্তৃপক্ষের তরফে গঠন করে তদন্ত করা হলো তো কোনো সময়েই আধিকারিকদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে। আটকানো সম্ভব হচ্ছে কি কর্মচারী মৃত্যু? এমনটাই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শ্রমিক মহল।
প্রসঙ্গতঃ গত মাসে অর্থাৎ ২০ নভেম্বর এই কারখানারই ব্লাস্ট ফার্নেসে ল্যাডেল থেকে বিগলিত লোহা ছলকে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। সেই দুর্ঘটনায় পুড়ে মৃত্যু হয় তিনজন শ্রমিকের। আঘাতগ্রস্থ একজন এখনো ক্লিনিকে মৃত্যুর সাথে থাবা লড়ছে। এ ঘটনার ১১ দিনের মাথায় আবারো একজন শ্রমিকের এইরকম ভয়ানক মৃত্যুতে একদিকে যেমন ক্ষোভে ফুঁসছেন শ্রমিকরা তেমনই আতঙ্কের তৈরি হয়েছে শ্রমিক সহ তাদের পরিবারের মনে।