" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের মিথ্যে প্রচার সঙ্ঘের সুপরিকল্পিত। আসল সত্যিটা কি? //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের মিথ্যে প্রচার সঙ্ঘের সুপরিকল্পিত। আসল সত্যিটা কি?

 





রাজ্য সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস মঙ্গলবার রাজভবনে ঘটা করে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করলেন। এটা করার জন্য দিল্লি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে নির্দেশ দেয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এর বিরোধিতা করে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, এতে  দেশভাগের ঘা এবং দুঃখজনক স্মৃতি খুঁচিয়ে তোলা হবে। অন্য দিকে, বিজেপি রাজ্যপালের সঙ্গে আছে।


দু'পক্ষ এবং সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করলেও সত্যিটা ঠিক কী কেউ কিন্তু সে কথা বলছেন না। সেই সুযোগে বিজেপি বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলায় ব্যস্ত। 

  

দেখা যাক, ইতিহাস কী বলছে?  আর ২০ জুন দিনটাই বা কেন বাছা হচ্ছে ? সত্যি কি এই দিন পশ্চিমবঙ্গ দিবস?


ভারতীয়দের হতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বৃটিশদের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরে   ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে মাউন্ট ব্যাটেন ভাইসরয় হিসেবে ভারতে আসেন। তখন কিন্তু দিল্লিতে কংগ্রেস, মুসলিম লীগ সহ অন্য দলের মিলিত জাতীয় সরকার চলছে। সেই সরকারের প্রধান নেহরু। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বল্লভ ভাই প্যাটেল। অর্থমন্ত্রী লীগের লিয়াকত আলি। বাংলায় প্রাদেশিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী মেদিনীপুর জেলার প্রখ্যাত আইনজীবী, মুসলিম লীগ নেতা, ১৯৪৬ সালে কলকাতার দাঙ্গার পিছনে যাঁর ভূমিকা ভালো নয়, সেই এইচ এস সুরাবর্দী।


জিন্নাহ্  প্রথম থেকেই বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগে আপত্তি করেছিলেন। তাঁর ধারণা ছিল, যদি পাকিস্থান হয় তাহলে এই দুই প্রদেশ তার সঙ্গে যুক্ত হবে। অন্যদিকে পণ্ডিত নেহরু। তিনিও এই দুই প্রদেশ ভাগের বিরুদ্ধে। কার্যত তিনি দেশ ভাগেরই বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্যাটেল প্রথম থেকেই দেশ এবং সেইসঙ্গে বাংলা ও পাঞ্জাব ভাগের পক্ষে ছিলেন। 


১৯৪৬ সালে কলকাতা ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হয়। এর পরে নোয়াখালীতে দাঙ্গা। দুই জায়গাতেই মূলত মুসলিমদের হাতে হিন্দুরা নিহত হয় বেশি। তার প্রতিক্রিয়ায় বিহারে দাঙ্গা হয়। এখানে আবার ঠিক উল্টো। এর পরে পাঞ্জাবেও হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাঁধে। ফলে মাউন্টব্যাটেন প্রথম থেকেই এই দুই প্রদেশ ভাগের পক্ষে। তিনি ভারতে আসার ৪ মাসের মধ্যেই ৩ জুন ১৯৪৭ দেশ ভাগের ব্যাপারে সরকারি প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানেই তিনি জানান, অবিভক্ত বাংলার ভবিষৎ নিয়ে বাংলার বিধানসভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ভোট দেবেন। তখন বাংলার গভর্নর ফেড্রিক বারেন্স।


এবার একটু পিছনে ফিরে তাকানো যাক। দেশ ভাগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার পরে যখন বাংলা ভাগের কথা হল, তখনই তৎকালীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী সুরাবর্দী এই ব্যাপারে আপত্তি করে বলেন হিন্দু এবং মুসলিমদের ভাষা ও সংস্কৃতি এক। পরস্পর বসবাস করছে ৫০০ বছরের বেশি। সুতরাং এক্ষেত্রে দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা সাজে না। বাংলা অবিভক্ত স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র হবে। সুরাবর্দী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম লীগ নেতার মতের বিরুদ্ধে গিয়েই এই প্রস্তাব দেন। 


তাঁর মতের পক্ষে ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর দাদা শরৎ বসু, কিরণ শঙ্কর রায় প্রমুখ। কৃষক প্রজা পার্টির সৈয়দ হাবিবুল রহমানও এর পক্ষে ছিলেন। 

বিপক্ষে ছিলেন কংগ্রেসের বিধানচন্দ্র রায়। হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। 


২০ মে ১৯৪৭ সুরাবর্দী তাঁর ৫ দফা পরিকল্পনা পেশ করে বলেন, ফ্রি স্টেট বেঙ্গলের প্রথম সংসদে ৩০ জন সদস্য থাকবেন। তারমধ্যে ১৬ জন মুসলিম। (অবিভক্ত বাংলায় মুসলিমদের সংখ্যা বেশি ছিল) ১৪ জন হিন্দু। হিন্দু মুসলিম সকলের সমানাধিকার এবং ভোট দানের ক্ষমতা থাকবে। নেহরু এই ব্যাপারে প্রাথমিক সম্মতি দেন। যদিও তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি জে বি কৃপালনি প্রবল আপত্তি করেছিলেন।


অর্থাৎ বাংলাকে ভাগ করা নিয়ে কংগ্রেস এবং লীগ দুই দলের মধ্যেই মতবিরোধ ছিল। বিজেপির পক্ষে বার বার হিন্দু মহাসভার কথা বলা হয়। মাউন্টব্যাটেন হিন্দু মহাসভা এবং তাঁদের একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি ( তাও আবার বিশ্ব বিদ্যালয়ের কোটায় সেখানকার শিক্ষকদের ভোটে জিতে) শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিকে পাত্তাই দেননি। এবং কোনও মিটিং এ ডাকেননি। তিনি শ্যামাপ্রসাদকে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের প্রতিনিধি হচ্ছে কংগ্রেস পার্টি।


যাই হোক মাউন্টব্যাটেন এর কথা মত ২০ জুন বেঙ্গল স্টেট অ্যাসেম্বলিতে ভোট হয়, অবিভক্ত বাংলা পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্থানে যাবে কিনা এই মতের উপরে। সেখানে বিধানসভার যৌথ অধিবেশনে ( মনে রাখতে হবে মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারপরেই কংগ্রেস  এবং হিন্দু মহাসভার একজন মাত্র প্রতিনিধি শ্যামাপ্রসাদ। সেখানে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রামহ সহ তিন জন) ১২০ - ৯০ ভোটে পাকিস্থানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মত খারিজ হয়ে যায়। মোশন ছিল, If home land of Bengali Hindu and Bengali Muslim remain undevided it will be a part of Constituent assembly of Pakistan. 


অর্থাৎ অবিভক্ত বাংলার পাকিস্থানে যাওয়ার পক্ষে মত পাশ হল না। কংগ্রেস এবং লীগের বড় অংশ এই ব্যাপারে বিরোধিতা করেন। সঙ্গে কৃষক প্রজা পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টির ৩ সদস্য।


ওই দিনই দ্বিতীয় বার ভোট হয়।  পূর্ববঙ্গের মুসলিম প্রধান জেলার প্রতিনিধিরা ভোট দেন। সেখানে মোশন ছিল, বাংলা ভাগ করা হবে কিনা।  ১০৬- ৩৫ ভোটে বাংলা ভাগের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। অর্থাৎ পূর্ব বঙ্গের মুসলিম এবং হিন্দু প্রতিনিধিরা জানিয়ে দেন, তাঁরা বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস, লীগ, কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের বড় অংশ ওই ১০৬ জনের মধ্যে আছেন।



 আবার ভোট হয়, যদি দেশ বিভক্ত হয়, তাহলে পূর্ববঙ্গের মুসলিম প্রধান জেলা গুলি কি Constituent assembly of Pakistan এর সঙ্গে যাবে ? সেখানে ভোট পড়ে ১০৭-৩৪। অর্থাৎ সব দলেরই অধিকাংশ প্রতিনিধি পাকিস্থান এর সঙ্গে যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন। এমনকি দলিত হিন্দু প্রতিনিধি অব্দি।


এই  ভোটের ফলাফল গভর্নর ফেড্রিক বারেন্স এর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ভাইসরয় এর কাছে পাঠিয়ে দেন।


তাহলে ২০ জুন কি করে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হল? এবং তার একমাত্র নেতা হয়ে উঠলেন হিন্দু মহাসভার শ্যামাপ্রসাদ? পুরোটাই একটা মিথ্যা এবং কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী শ্যামাপ্রসাদ এর উপরে একটা সাজানো মিথ তৈরি করার চেষ্টা। যেন ওনার জন্যই আজ পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা বেঁচে আছে। 


যে বিধান চন্দ্র রায় বা জ্যোতি বসু এই ব্যাপারে একই সঙ্গে ছিলেন, দুই জনেই বলেছিলেন, বাংলা যদি ভাগ হয়, তাহলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ ভারতে থাকবে। তাঁদের যেন কোনো ভূমিকাই নেই!


মোদী ক্ষমতায় আসার পরে একের পর এক মিথ্যাকে সত্যি বলে প্রচার করছেন যা RSS এর এজেন্ডার সঙ্গে খাপ খায়। 


এই ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস ব্যাপারটাও ঠিক তাই।


দেশ ভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটে। কিছু জেলা যুক্ত হয়। কিছু বাদ যায়। যেমন পূর্ণিয়া বাদ যায়। পুরুলিয়া যোগ হয়। যুক্ত হয় কোচবিহার। আবার বাদ যায় সিংভূম মানভূম। সুতরাং কী করে ২০ জুন এই প্রদেশের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হচ্ছে, সেটাই মাথায় ঢুকছে না!


C@ প্রসূন আচার্য

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies