ভোরের আলো সবে ফুটেছে। তড়িঘড়ি আখাতে ভাতের হাড়ি চাপিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন সনদি সরেন, সরস্বতি মার্ডি, সুমিত্রা টুডুর, অন্নপূর্ণা মালরা। কাঁধে লালঝান্ডা। ঝাড়খন্ড ঘেঁষা রাজনগরের মাচানতলী আদিবাসী মহল্লার ভোরের রাস্তার দখল নিলেন মহিলারাই।
ভাঙা কোমরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারানো বছর পচাত্তরের লক্ষ্ণীরাম টু্ডু বসলেন মোড়ায়। হাতে হাতে লালঝান্ডা নিয়ে গাঁয়ের লোকেরা তার কাছে যেতেই দু-চোখ ছলছল করে ওঠে তাঁর। এই মহল্লা থেকে ঢিলছোঁড়া দুরত্বেই তো পড়েছিল শহীদ নন্দলাল মিস্ত্রির ক্ষতবিক্ষত দেহ। লক্ষ্ণীরাম বলেন, ‘‘নন্দদার সাথেই তো ঘুরতাম আমি। উঁর ব্রেন আলাদা ছিল। সবাইকে সমান চোখে দেখত। ওকে না দমালে যে আর কেউ উঠত না। তাই তো মেরে দিল দাদাটাকে। তবে আর নয়। ভুট দেবই। আমাকে ধরে নিয়ে যাস তুরা শুধু।’ নন্দলাল মিস্ত্রির ছেলে উত্তম মিস্ত্রি এবার লাল ঝাণ্ডার প্রার্থী।
মাওবাদী-তৃণমূলের আঁতাত স্পষ্ট হয়েছিল সেই খুনের নেপথ্যে। তারপর থেকেই যত অত্যাচার শুরু হয়েছিল লালঝান্ডার উপর। এই তল্লাটে খুন, খুনের চেষ্টা, মারধরের মিথ্যা মামলা আছে ছত্রিশ জনের বিরুদ্ধে। তবুও লালঝান্ডা উড়ছে গাঁয়ে গাঁয়ে। ফের দেওয়াল পর দেওয়াল কাস্তে হাতুড়ি তারায় ছয়লাপ। মাচানতলী, নতুনগ্রাম, করঞ্জাবনী থেকে তারাশোল, কুন্ডিরা - পরপর জনপদে যেন নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
শত হামলা, মামলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গাঁয়ের লোকেরা বলছে “ফের চেষ্টা হবে ভোট লুটের। তবে তীর ধনুক নিয়ে বুথ আগলাবো আমরাই।” গোটা তল্লাটের জেদও এমনই, এককাট্টা হচ্ছে তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে।