দীর্ঘ রোগভোগের পর দুর্গাপুরের ইস্পাত অঞ্চলের বামপন্থী সেনানী সপ্তর্ষি প্রকাশ মন্ডল প্রয়াত হয়েছেন।গতকাল তত স্মরণে এক স্মরণসভার আয়োজন করে সিপিআইএম ১ নং ইস্পাত এরিয়া কমিটি।শ্রদ্ধায় স্মরণে সপ্তর্ষি প্রকাশ মন্ডল
দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার একজন দীর্ঘদিনের শ্রমিক ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সপ্তর্ষি প্রকাশ মণ্ডল গত ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সালে প্রয়াত হয়েছেন।
১৯৯১ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে DSP, কোক ওয়েনসের কোল হ্যান্ডলিং এ স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে যোগদান করেন সপ্তর্ষি। যোগদানের পর থেকেই তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সেকশন কমিটির কনভেনর, বিভাগীয় কমিটির স্থায়ী সদস্য ও ইউনিয়নের কাউন্সিল কমিটিরও সদস্য ছিলেন। তাঁর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তিনি সকলের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছিলেন।
সপ্তর্ষি ২০০৮ সালে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন এবং জীবনের শেষদিন পার্টির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। বামপন্থী আন্দোলন ও সকল প্রকারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে তিনি পার্টির একজন যোগ্য সাথী ছিলেন।
তিনি এলাকায় সামাজিক আন্দোলনের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।মনিমালার ব্রতচারী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।২০১৭ সালে মিটিং থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।তারপর থেকেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।
কারখানায় কাজের জায়গাতেও তিনি একজন দক্ষ শ্রমিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন ও সকলের সম্মান ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। সহকর্মীদের বিপদে আপদে তিনি সবসময়ই তাদের পাশে থেকেছেন। সামাজিক জীবনেও তিনি দায়িত্বশীল মানুষ ও সচেতন নাগরিক হিসেবে সকলের কাছ থেকে ভালোবাসা ও সম্মান অর্জনে সমর্থ হয়েছেন।
শুধু তাইই নয়, একথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সপ্তর্ষি মাত্র কুড়ি বছর বয়েসে চাকরিতে যোগদানের পাশাপাশি, নানা অসুস্থতায় ভুগতে থাকা অবিবাহিত বোনের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে পরিবারের সমস্ত কর্তব্য নিষ্ঠা সহকারে পালন করেছেন। এক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
সপ্তর্ষি অসুস্থ অবস্থাতেই ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পরে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর এই অকাল প্রয়াণ আমাদের কাছে গভীর দূঃখের ও এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই বিবেচিত হবে। মৃত্যুকালে তিনি তাঁর স্ত্রী, মা ও দুই বিবাহিত বোনকে রেখে গেছেন। এছাড়াও, তিনি কাজের সহকর্মীদের কাছেই অত্যন্ত আদরের, স্নেহের ও ভালোবাসার পাত্র ছিলেন যারা তাকে দীর্ঘদিন স্মরণে রাখাবেন।
তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সংগঠন চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি , শহরের মিশন হাসপাতাল থেকে শুরু করে দিল্লির বসন্ত খুঁজে স্পাইন হাসপাতাল সমস্ত জায়গায় চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়।
সিপিআইএম দুর্গাপুর ইস্পাত ১ এরিয়া কমিটি এক বিবৃতি প্রকাশের পাশাপাশি স্মরণ সভার আয়োজন করে আসিসি জব্বর স্মৃতি ভবনে।সভার শুরুতে মাল্যদান করেন নেতৃত্ব সহ তার সহকর্মীরা।উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুরে পূর্বের প্রাক্তন বাম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায়, বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা প্রফুল্ল মন্ডল সহ একাধিক বাম নেতৃত্ব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এরিয়া কমিটির সম্পাদক দীপক ঘোষ , বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা ও শিলুয়াইএম পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য বিশ্বরূপ ব্যানার্জি,ও প্রাক্তন বিধায়ক সন্তোষ দেব রায়।এবং এক সহকর্মী সুব্রত ব্যানার্জি।
প্রত্যেকের বক্তব্যের সারাংশ এটাই সপ্তর্ষির সংগঠনের প্রতি, সাংগঠনিক কাজের প্রতি, সমাজ ও সংসার জীবনের প্রতি, এবং অবশ্যই শ্রমিক হিসেবে কাজে প্রতি যে নিষ্ঠা আমরা যদি তা অনুসরণ করে চলতে পারি, সেটাই হবে তাঁর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।সপ্তর্ষি, আমাদের মধ্যেই চিরকাল বেঁচে থাকবেন।