বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হয়েছে এবার শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডক্টর সুকৃতি ঘোষালের সমর্থনে দুর্গাপুরের বুকে চলছে প্রচার অভিযানের ঢেউ, এবার সেই প্রচার অভিযানে এক নবমতম সংস্করণ হিসেবে আজ দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে গান্ধী ময়দানের হয়ে গেল এক বৃহৎ জনসভায়। এই জনসভায় ডাক দিয়েছিল দুর্গাপুরের সিপিআইএম পশ্চিম এরিয়া কমিটির উদ্যোগে, জনসভায় ভুল বক্তা হিসেবে আসেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায় চৌধুরী এবং ডিওয়াইএফআইয়ের সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি।অবশ্য নতুন করে মীনাক্ষী মুখার্জি কে পরিচয়ের কোনো প্রয়োজন নেই বর্তমানে বাংলার বামেদের যুব ব্রিগেডের ক্যাপ্টেন মীনাক্ষী মুখার্জি ইনসাফ ব্রিগেড সমাবেশে যা প্রবলভাবে প্রচারিত হয় গোটা বঙ্গে সেই মীনাক্ষী মুখার্জি বক্তব্য শুনতে আজ মাঠ ভরিয়ে তোলেন দুর্গাপুরের বাসিন্দারা মূলত পাঁচটি ওয়ার্ড এর সমাবেশ মনে হলেও মাঠ ছাপিয়ে রাস্তায় উপর জনসমাবেশ তাতে স্পষ্টতই মনে হয় গোটা দুর্গাপুর বাসীর আগ্রহ ছিল আজকের গান্ধী ময়দান।
সমাবেশের শুরুতেই সংগীত পরিবেশন করেন লহরী সাংস্কৃতিক শাখা।এরপর বক্তব্য রাখেন দুর্গাপুর বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী অধ্যাপক সুকৃতি ঘোষাল তিনি তুলে ধরেন কেন্দ্রের ভ্রান্ত নীতির ফলে কিভাবে শহরের শিল্পশহর আজ ধ্বংসের মুখে এই শিল্পকে বাঁচাতে এবারের নির্বাচনে লড়াই। অবশ্য এই বলে তিনি থেমে থাকেননি তিনি বলেছেন কিভাবে ধীরে ধীরে দেশের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করার প্রক্রিয়া নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজেপি তার সাথে সাথে আর্থিক বৈষম্য চরম আকার ধারণ করছে তাই লোকসভায় জনবিরোধী নীতি প্রতিবাদের পাশাপাশি তার প্রতিরোধ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।এমন অবস্থায় লোকসভায় বামেদের উপস্থিতি একান্ত ভাবে কামনা করছে গোটা দেশবাসী। দুর্গাপুর বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র তার থেকে আলাদা কিছু নয় তাই তিনি দুর্গাপুর বাসীদের কাছে আবেদন করেছেন যখন দেশ সঙ্কটের যখন শিল্প সংকটে যখন শ্রমিকরাও সংকটে তখন সংকট নিরসনে লোকসভায় বামপন্থীদের উপস্থিতি গ্যারান্টি করতে হবে আর সেটি করতে পারলে দেশের সংবিধান অক্ষুন্ন রাখার লড়াইয়ে আরো শক্তিশালী হবে ।
তিনি বলেছেন বর্তমানে রাজ্য সরকার যেভাবে বিজেপি বিরোধী কথা বলছে তাতে এদেশের এই রাজ্যে তাদের গভীর সমঝোতার প্রকাশ পাচ্ছে একদিকে বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা গ্রেপ্তার হচ্ছে সেখানে দুর্নীতির পাহাড় জমছে সেখানে এরকম তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না স্পষ্ট ধারণা বাংলায় এই দুর্নীতির সরকারকে স্পষ্টতই মদদ দিয়ে চলেছে কেন্দ্র সরকার তাই লোকসভায় বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি করলে বঙ্গের এই দুর্নীতির পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আভাস রায় চৌধুরী বলেন দেশ এখন একটা বড় প্রশ্নের মুখে একটা বড় লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে লড়াইটা কত সংখ্যায় লোকসভা আসবে তা নিয়ে নয় লড়াইটা দেশের সংবিধান অক্ষুন্ন থাকবে কিনা লড়াইটা দেশের শ্রমজীবী মানুষ রা তাদের কাজের অধিকারকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে কিনা লড়াইটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাবে কিনা এই মূলগত কিছু প্রশ্ন আজ । সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিভিন্ন রাজ্য সরকারের উপর যেভাবে শর্ত আরোপ চাপানো হচ্ছে তাতে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বিপর্যয়ের মুখে তিনি তুলে ধরেন মিডিয়াকে কিভাবে ব্যবহৃত করে সরকার বিরোধী মনোভাব কে দমানোর চেষ্টা চলছে এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ফানুস উড়ানোর চেষ্টা চলছে বিভিন্ন মিডিয়াতে। বিভিন্ন কালাকানুন সংসদে পাস হচ্ছে সে গায়ের জোরে এমন অবস্থায় দেশের সংবিধান রক্ষার পাশাপাশি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোতে রক্ষা করার প্রয়োজনের উপর জোর দিয়েছেন তিনি।
সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন দেশের প্রয়োজনে বামপন্থীদের বেশি করে সংসদে প্রয়োজন দেশে যখন বহুজাতিকের হাতে চলে যাচ্ছে মূল্যের নিয়ন্ত্রণ একদিকে যেমন জীবনদায়ী ওষুধের দাম আকাশছোঁয়া আরেকদিকে জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা গুলির বেহিসাবি ভাবে শাসকশ্রেণীকে ইলেক্টরেল বন্ডের মাধ্যমে সাহায্য প্রদান। দেশের মানুষের কাছে পরিষেবা যেন এক সোনার পাথরবাটি বেকার যুবদের শিক্ষার পরে তাদের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চয়তায় ভরা, একটা সময় তিনি বামেদের শাসনের একটি দিক উল্লেখ করেছেন যেমন সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আগে বেকার যুবকরা তাকিয়ে থাকত এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সেই এক্সচেঞ্জ আজ ধ্বংসপ্রায় যেখানে আর এক্সচেঞ্জের মারফত কোন চাকরির ইন্টারভিউ নেওয়া হয় না ।বেকার যুবদের সামনে অনিশ্চয়তায় ভরা ভবিষ্যৎ, এই ব্যবস্থা বদল হবে তখনই যদি সংসদের জনবিরোধী নীতির প্রতিরোধ করা যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন গত কয়েকটি লোকসভা সেশনে বেশ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একাধিক বিল পাস করেছে বিনা আলোচনায় যার ফলে সরকারের স্বৈরাচারী রূপটাই প্রকাশ করে করছে তাই এই স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার অবসান এর জন্য আগামী লোকসভায় বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির উপর জোর দেন ।
দেশের সুরক্ষাও আজ বিপন্ন বহুজাতিক সংস্থার হাতে চলে যাচ্ছে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এমন অবস্থায় দেশ রক্ষার লড়াই একটা বড় সন্ধিক্ষণে উপস্থিত তাই লোকসভা নির্বাচন আগামী লোকসভা নির্বাচন কোন সরকার বদল এর লড়াই নয় তিনি জোর দেন আগামী লোকসভা নির্বাচন দেশ অটুট থাকবে কিনা সেই লড়াইয়ের পৃষ্ঠভূমি হতে চলেছে আগামী লোকসভা নির্বাচনের পর আদৌ কোনো নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে কিনা আদৌ সংবিধানের কাঠামো থাকবে কিনা একাধিক প্রশ্নের মধ্যেই মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন সময় এসেছে দেশ প্রেমিক হওয়ার সময় এসেছে দেশের শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাই দেশ রক্ষার লড়াইয়ে প্রতিটি মানুষের ঐক্য গড়ে তোলেন তিনি থাকতেন তিনি বিশ্বাস করেন দুর্গাপুরের পৃষ্ঠভূমি একাধিকবার দুর্গাপুর প্রমাণ করেছে দুর্গাপুর হাঁটতে শেখেনি তাই এবারের লড়াইয়ে সেই দুর্গাপুর পাসের হার না মানা হার এর হার না মানা লড়াইয়ের ফসল উঠবে সেই বিশ্বাস রাখেন ।তিনি বলেন সমাবেশে উপস্থিতি মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করছে দুর্গাপুর এবার পরিবর্তন আনতে চলেছে তিনি বিজেপি নেতৃত্ব কে কটাক্ষ করে বলেন প্রাক্তন সাংসদ আলু ওয়ালিয়াকে এলাকার মানুষ দেখতে পান না যদি তিনি দুর্গাপুরের জন্য কতগুলি প্রশ্ন করার কিছু তথ্য তুলে ধরেন সেই তথ্যের মধ্যে তিনি লোকসভার রেকর্ডের তিনি মাত্র একবার দুর্গাপুর নিয়ে প্রশ্ন করেছেন । দুর্গাপুর বাঁচানোর লড়াই আর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বেড়াজাল ভাঙার লড়াই জারি থাকবে এবারের নির্বাচনে দুর্গাপুর এক হওয়ার আহ্বান করলেন এই প্রচারণার এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জবাব দেওয়ার জন্য আগামী লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী করার আহ্বান জানান ।
নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন আজকের সমাবেশ বিশেষ করে বাম সমর্থকদের আলাদা একটা অক্সিজেন দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । বিশাল জনসমাবেশ আজ দুর্গাপুর গান্ধী ময়দান দেখল তাতে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা যায় দুর্গাপুর লোকসভা নির্বাচনের লড়াই দ্বিমুখী নয় হতে চলেছে ত্রিমুখী। সমস্ত হিসাব পাল্টে দিতে প্রস্তুত বামফ্রন্ট ।
আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াই বেশ চমকপ্রদ হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য।জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বর্ষীয়ান বাম নেতা বিপেন্দু চক্রবর্তী।
