ভারতের ফুটবল কিংবদন্তি বাইচুং ভুটিয়া মঙ্গলবার রাজনীতি থেকে তার সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছেন। তিনি তার সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, "নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর আমার উপলব্ধি রাজনীতি আমার জন্য নয়।" এই ঘোষণা অনেককেই অবাক করেছে, বিশেষ করে যারা তার রাজনীতিতে অংশগ্রহণকে সমর্থন করেছিলেন।
এক দশকের রাজনৈতিক পথচলা
বাইচুং ভুটিয়া, যিনি ভারতের ফুটবল দুনিয়ায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত, তিনি ২০১১ সালে তার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং সিকিমের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তার রাজনীতির এই যাত্রা মোটেই মসৃণ ছিল না।
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যাত্রা
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তার যাত্রা খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি দল ছেড়ে দেন এবং পরবর্তীতে সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টে যোগ দেন। এখানে থেকেও তিনি সিকিমের উন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হন।
হামরো সিকিম পার্টির সূচনা
এরপর, নিজের একটি দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি হামরো সিকিম পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। দলটির মূল লক্ষ্য ছিল সিকিমের স্থানীয় জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা এবং উন্নয়নমূলক কাজ করা। কিন্তু দলটির জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও নির্বাচনে সফলতা আসেনি।
শেষ পরাজয় এবং সিদ্ধান্ত
২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রার্থী রিক্সন লামা দর্জির কাছে ৪৩৬৩ ভোটে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের পর তিনি বুঝতে পারেন যে রাজনীতি তার জন্য সঠিক পথ নয়। তার এই সিদ্ধান্তের পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হল একের পর এক পরাজয় এবং রাজনীতির জটিলতা।
ভুটিয়ার প্রতিক্রিয়া
বাইচুং ভুটিয়া তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, "গত এক দশকে আমি ৬ বার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, কিন্তু কোনোবারই জয়ী হতে পারিনি। আমার উপলব্ধি হয়েছে যে রাজনীতি আমার জন্য সঠিক নয়। আমি সিকিমের মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি, কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল আমার চেষ্টাকে বারবার ব্যর্থ করেছে।"
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর বাইচুং ভুটিয়া এখন কি করবেন, সে বিষয়ে তিনি এখনও কিছু জানাননি। তবে ফুটবল এবং সিকিমের উন্নয়নের জন্য তিনি অন্যান্য উপায়ে কাজ করে যেতে পারেন। তার ফুটবল একাডেমি এবং সামাজিক কার্যক্রমে তিনি আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।
বাইচুং ভুটিয়ার রাজনীতিতে এক দশকের যাত্রা ছিল সংগ্রামময়। ফুটবলের মাঠে সফল হলেও রাজনীতির মঞ্চে তার যাত্রা ছিল চ্যালেঞ্জপূর্ণ। তবে তার এই সিদ্ধান্ত হয়তো তাকে নতুন কিছু করার সুযোগ দেবে, যেখানে তিনি তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবেন। সিকিমের মানুষ তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে তার উন্নয়নের প্রচেষ্টার জন্য।