এবারের সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে একাধিক চমক , যেমন এক্জিট পোল কে মিথ্যে প্রমাণিত করে কংগ্রেসের উঠে আসা। ঠিক তেমনি জোট সমীকরণে বিজেপি এর বিজয়রথ থমকে যাওয়া। এরমধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে আরো এক চমক সৃষ্ট হলো অসমের ধুবড়িতে , সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ১০ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া। কংগ্রেস জোটের প্রার্থী রাকিবুল হুসেন এক অসাধারণ জয় উপহার দিয়েছেন কংগ্রেসকে , রাকিবুল পেয়েছেন প্রায় ১৪ লক্ষ ভোট তার প্রতিদ্বন্ধি আজমল পেয়েছেন মাত্র ৪ লক্ষ ভোট।
ধুবড়ি লোকসভা ১০ টি বিধানসভা নিয়ে গঠিত। প্রতিটি বিধানসভা হিসেবে করলে রাকিবুল পেয়েছেন প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট যা এখন অবধি এবারের লোকসভা নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার রেকর্ড। যদিও রাকিবুল স্থানীয় ছিল না , উপরোন্ত এলাকায় তখন আজমল ১৫ বছর ধরে সাংসদ। এমন অবস্থায় তার লড়াই সহজ ছিল না আরেকদিকে স্থানীয় উপভাষা গুলি তিন ই প্রায় ৬ ম্যাশ ধতে আয়ত্ত করেছিলেন কংগ্রেসের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিয়মিত কাজের নিরিখে। সাংবাদিকরা যখন প্রশ্ন করেন তার এই বিপুল জয়ের রসায়ন সম্বন্ধে তিনি বলেন শুধু সংখ্যালঘু ভোটার নয় বহু হিন্দু ভোট তাজে এই অসাধারন জয় এনে দিতে সাহায্য করেছেন।
তিনি বলেন দেশ জুড়ে বিজেপি র বিভাজন নীতি অন্যদিকে সরকারের জন বিরোধী নীতির ফলে মানুষ কার্যত বিরোধিতায় নামেন। সেইসঙ্গে কংগ্রেসের ধারাবাহিক লড়াই এলাকায় মানুষদের কাছে একটা বিশ্বাস যোগ্য বিকল্প দাঁড় করিয়ে এনে দেয়। একটি আঞ্চলিক দল aidiuf কে হারানো নিশ্চিত হয় এই কারণে যেখানে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে সরকার গড়বে কংগ্রেস। ধুবড়ীর মানুষ ধর্মীয় বিভাজনের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে যার ফলাফল এক ঐতিহাসিক জয় ধুবড়িতে কংগ্রেসের। অন্যদিকে বদরুদ্দীন আজমলের বিরুদ্ধে অভিযগ তিনি আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন যার ফলে তার বিজেপি বিরোধিতা একটি নাটক মনে করেছেন ভোটাররা। অনেকেই বলেছেন এলাকায় আগমনের একাধিক ব্যবসা তা রাখা করতে বিজেপি এর সাথে সখ্যতা তাকে এইভাবে পরজয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। দক্ষিণ আসামের ভারত বাংলাদেশ সীমানাবর্তী এলাকায় ব্যাপক বিজেপি বিরোধী অবস্থান তৈরি হয়েছিল একদিকে নাগরিক পঞ্জীকরণ আইন অন্যদিকে বিজেপি সরকারের বুলডোজার নীতি যার ফলে এলাকায় বহু মাদ্রাসা স্কুল ধ্বংস করা হয়েছিল যদিও নীরব থেকেছে তিনবারের সাংসদ আজমল। এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাব দেখা গেছিলো গোলোকগঞ্জ এবং বিলাশীপাড়া বিধানসভায় ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এই বিষয়ে। এই দুই কেন্দ্র থেকে ব্যাপক ভোট পেতে দেখা গেছে রাকিবুলকে প্রায় ৭০০০০ করে ভোট পেয়েছে এই কেন্দ্র থেকে অন্যদিকে আজমল পেয়েছিলেন মাত্র ১০০০০ করে ভোট।
ধুবড়ি — ধুবরি, মানকাচর, জলেশ্বর, গোয়ালপাড়া পূর্ব, শ্রীজনগ্রাম, মান্দিয়া, গৌরীপুর, বিলাসীপাড়া, বীরসিংহ জারুয়া, এবং চেঙ্গা বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ছড়িয়ে থাকা 26,60,827 জন ভোটার জনসংখ্যার — সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের সর্বাধিক শতাংশ রয়েছে রাজ্যে, প্রায় 85% ভোটার মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাদের মধ্যে প্রায় সাত লাখ ভোটার 'দেশি' বা আদিবাসী মুসলমান, আর ১৪ লাখের বেশি ভোটার বাংলাভাষী অভিবাসী মুসলমান।তারমধ্যে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা বদরুদ্দিন আজমলের বিরুদ্ধে এবং ধুবরি থেকে তিনবারের সাংসদ, যিনি মাল্টি-মিলিয়নেয়ার পারফিউম ব্যারনও ছিলেন তার বিরুদ্ধে লড়াই কার্যত অসম ছিল তবু মানুষের ভালোবাসায় এবারের লোকসভায় তিনি ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ।