অরুণা শানবাগ থেকে RG কর: এক নির্মম ট্র্যাডিশন চলছেই
—— ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
মুম্বাইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হাসপাতালে একজন নার্স ছিলেন অরুণা শানবাগ। ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর সেই হাসপাতালের এক ওয়ার্ড-বয়, সোহনলাল ভরত বাল্মীকী, অরুণার উপর নৃশংস আক্রমণ করে। ক্লান্ত শরীরে, ৩০ ঘণ্টা ডিউটির পর যখন অরুণা পোশাক বদলাচ্ছিলেন, তখন সোহনলাল হঠাৎ করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই সময় নার্সদের জন্য আলাদা চেঞ্জিং রুম বা টয়লেটের ব্যবস্থা ছিল না। অনেকেই বিভিন্ন রুমে তাদের পোশাক বদলাতেন বা সামান্য বিশ্রাম নিতেন।
অরুণার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ ছিল। হাসপাতালে একটি বেসমেন্টে পরিত্যক্ত ঘর ছিল, যেখানে পশুদের সার্জারি করা হত। নার্সরা সেই ঘরটিকেই তাদের চেঞ্জিং রুম হিসেবে ব্যবহার করতেন। সেখানেই সোহনলাল অরুণার গলা কুকুরের চেন দিয়ে বেঁধে তাকে ধর্ষণ করে। পরের দিন অরুণাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায়, মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। চেনটি এত জোরে চেপে বসেছিল যে তার মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছাতে পারেনি, যার ফলে তার সেরিব্রাল অ্যানক্সিয়া হয়। এরপর অরুণা কোমায় চলে যান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪ দশক ধরে কোমাতেই ছিলেন।
অরুণা শানবাগের কেসটি আজ বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম PVS-case (পারসিসটেন্ট ভেজিটেটিভ স্টেট) হিসেবে পরিচিত। ৪২ বছর ধরে তিনি কোমায় বেঁচে ছিলেন এবং মারসি কিলিং' এর জন্য আবেদন জানিয়ে গেছেন।
আজ RG কর হাসপাতালের ঘটনাও অরুণা শানবাগের ঘটনার মতোই একটি নির্মম ট্র্যাডিশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা রোগীদের সুরক্ষা দেন, তাদের নিজের সুরক্ষার কী ব্যবস্থা আছে? যারা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিয়োজিত, তাদের জন্য বেসিক সুবিধাগুলোও দেওয়ার কি প্রয়োজন নেই? খালি ঝকঝকে বিল্ডিং বানানোই কি সরকারি পরিকাঠামো? ডাক্তার নার্সরা কি ঈশ্বরের দূত? তারা কি রক্ত-মাংসের মানুষ নন?
যারা ৬ ঘণ্টার ঘুমের প্রেসক্রিপশন দেয়, তাদের নিজেদের বিশ্রামের প্রয়োজন নেই? যারা হাইজিন নিয়ে আলোচনা করেন, তাদের হাইজিন মেন্টেন করতে হয় না? যারা মহিলাদের পরিষ্কার টয়লেট এবং পানীয় জল ব্যবহারের পরামর্শ দেন, তাদের এসবের প্রয়োজন হয় না?
আমাদের দেশে প্রতি ৮৩৪ জন নাগরিকের জন্য একজন ডাক্তার এবং প্রতি ৪৭৬ জন নাগরিকের জন্য একজন নার্স রয়েছেন। একজন ডাক্তারকে হত্যার অর্থ হলো প্রায় ১০০০ জন মানুষকে মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়া।
—— ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ