বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রয়াণে বঙ্গের বাম রাজনীতিতে একটি যুগের অবসান ঘটল। ফুসফুসজনিত সমস্যায় দীর্ঘদিন ভোগার পর শেষমেশ আর লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারলেন না তিনি। বারবার হাসপাতালে যাতায়াত করেও অবশেষে তিনি হার মানলেন এবং চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই যেন বাংলার বাম রাজনীতির একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একজন বাম নেতা এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। শিল্পী পরিবারে জন্ম নেওয়া এই নেতার কাকা ছিলেন বিশিষ্ট কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।
২০০০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের অধীনে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসীন ছিলেন। এই সময়কালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়নের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল টাটা ন্যানো কারখানার সিঙ্গুরে স্থাপন। যদিও সেই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি, তবু তিনি শিল্পোন্নয়নের জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।
সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লক্ষ লক্ষ বেকারের স্বপ্ন পূরণের জন্য একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তার রাজত্বকালে বাংলায় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেছিলেন, যার মধ্যে নন্দন অন্যতম।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিশ্বাস করতেন যে বেকার যুবকদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি। তিনি পশ্চিমবঙ্গে আধুনিকায়নের পথে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তার স্বপ্নগুলি অপূর্ণ থেকে যায়।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শেষ জীবনে নিজের বাড়িতে আবদ্ধ থাকলেও তার সংগ্রামী চরিত্র এবং সাধারণ জীবনযাপনের জন্য তিনি সর্বদাই মানুষের হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছিলেন। তার প্রয়াণে বাংলার বাম কর্মী সমর্থকরা গভীর শোকাহত।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদ্মভূষণ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, আপোষের নীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে। শেষ জীবনে তিনি নিজের আদর্শকে অটুট রেখে জীবন কাটিয়েছিলেন। তার প্রয়াণে বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ তার শেষ যাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হয়েছেন।