কলেজ থেকে ডিউটিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলেন। ঠিক যেমন আমরা প্রতিদিন কাজে বেরোই। কিন্তু নাইট ডিউটি শেষ করে তার অর্ধনগ্ন লাশ পাওয়া গেল সেই কলেজের সেমিনার রুমেই। যেই রুমে রাতে ঘুমোতে গিয়েছিলেন কিছুটা বিশ্রাম বা পড়াশোনার আশায়।
দুর্ভাগা সেই ছাত্রী বা চিকিৎসকের দেহে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। সিসিটিভি কেন অকেজো করা হল, সেটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে, এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি এখনো।
কতৃপক্ষ দায় নিতে নারাজ। তারা জানিয়েছেন, একা সেমিনার রুমে শুতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার নিজেরই ছিল, যা তাদের দায়িত্ব নয়। এদিকে, তার বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র এবং সিনিয়ররা সবাই প্রতিবাদে ফেটে পড়েছে। আমরা যারা দূর থেকে এই খবর শুনছি, তারা স্তম্ভিত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছি।
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও পোস্টমর্টেম রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একাধিক দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপর কি হবে, কেউ জানে না।
মৃত সেই চিকিৎসক, যিনি আমাদের বোনের মতোই, তার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কি আপনাদের মনেও? চিকিৎসক হিসেবে না ভাবুন, অন্তত একজন মানুষ হিসেবে তো প্রতিবাদ করা উচিত। এই ঘটনার ধামাচাপা যেন না পড়ে যায়, সেই দাবি তো করতেই পারেন। একবার এসে দেখুন কিভাবে ২৪-৩৬ ঘন্টা কাজ করতে হয় এই মহিলা চিকিৎসকদের।
যারা এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তারা সুরক্ষা তো দূরে থাক, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন না। এমনকি বিশ্রামের জন্যও নেই যথেষ্ট জায়গা। ট্রলি বা হাসপাতালের বেডেই কখনো একটু জিরিয়ে নিতে হয় তাদের।
কিন্তু কেউ কেউ নিয়তির পরিহাসে অর্ধনগ্ন, আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় প্রাণ হারান, রেখে যান সমাজের মুখোশ খুলে দেওয়ার বার্তা। তাদের লাশকাটা ঘরে শুইয়ে রাখা হয়, সমাজের ভুল-ত্রুটিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর জন্য।
প্রতিবাদ করুন, ন্যায় বিচার চাইতে গর্জে উঠুন। এ লড়াই শুধু আমার বা আপনার নয়, এ লড়াই আমাদের সবার। এগিয়ে আসুন, আর জি কর মেডিকেল কলেজের কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করুন সুষ্ঠু তদন্ত করতে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে। না হলে, আগামীকাল আমি বা আপনিও সেই বোনের মতোই লাশকাটা ঘরে নিশিযাপন করব।
কৌস্তভ চকো চ্যাটার্জী
(ছবি সংগৃহীত)