দুর্গাপুর ইস্পাত অঞ্চলের ছয় জন শ্রমিক একটি অসাধারণ বাইক যাত্রার পরিকল্পনা করেছেন, যার গন্তব্য হিমাচল প্রদেশের দুর্গম লাহুল স্পিতি এলাকা। তাদের এই যাত্রার মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা নয়, বরং শান্তি এবং মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। তাদের উদ্যোগটি ইতিমধ্যেই প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে।
শান্তির বার্তা নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে যাত্রা
শ্রমিকরা তাদের যাত্রার মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের শান্তি ও মানবতার আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চান। লাহুল স্পিতি অঞ্চলটি বৌদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত, এবং এই জায়গায় পৌঁছে তারা তাদের বাইক যাত্রা শেষ করার পরিকল্পনা করেছেন। যাত্রার শুরু আজ সকালে দুর্গাপুর ইস্পাতের কেন্দ্রস্থল থেকে হয়, যেখানে শ্রমিকরা রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট বাইকে যাত্রা শুরু করেন। তাদের বিদায় জানাতে ইস্পাত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন ইস্পাত কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং অন্যান্য সহকর্মীরা।
ইস্পাত কর্তৃপক্ষের সমর্থন ও সংবর্ধনা
দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের সিনিয়র কর্মকর্তারা, যেমন ভি কে সিং, এই যাত্রাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, বর্তমান সময়ে পরিবেশ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। "এটি শুধু একটি বাইক যাত্রা নয়, এটি একটি প্রতীকী অভিযান, যেখানে শ্রমিকরা পরিবেশ সচেতনতার বার্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন," বলেন তিনি।
৫০ ঊর্ধ্ব বয়স, কিন্তু মনের জোর অটুট
দলের সদস্যরা সকলেই ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী, তবুও তাদের মনের জোরে কোন ভাটা পড়েনি। দলের লিডার বিশ্বব্রত কুমার বলেন, "আমাদের বয়স কোনও বাধা নয়। আমাদের মনের জোরই আমাদের আসল শক্তি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই যাত্রার পরিকল্পনা করছি এবং এটি বাস্তবায়নের সময় এসেছে।" তার সহধর্মিণীও তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন।
১৬ দিনের দীর্ঘ ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রা
এই যাত্রাটি প্রায় ১৬ দিন ধরে চলবে, যেখানে প্রতিটি দিনই একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। তাদের বাইকগুলোতেই থাকবে সমস্ত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, খাদ্য এবং অন্যান্য সামগ্রী। দলের আরেক সদস্য দীপক ঘোষ জানান, এর আগেও তারা নেপালে একটি বাইক ট্রিপে অংশ নিয়েছিলেন, যা একটি অত্যন্ত দুর্গম এবং কঠিন পথ ছিল। সেই অভিজ্ঞতা তাদের এই যাত্রায় সাহস যোগাবে।
পরিবেশ ও শান্তির বার্তা
দলের সদস্যরা বলেন যে, লাহুল স্পিতির মতো জায়গায় যাত্রা করার মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তি ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। বর্তমান সময়ে, যখন পৃথিবী জুড়ে পরিবেশ দূষণ এবং সামাজিক অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন এই ধরনের বার্তা অত্যন্ত জরুরি। তারা আশা করেন, তাদের যাত্রা সফলভাবে শেষ হবে এবং তারা দুর্গাপুরে ফিরে আসবেন একটি নতুন বার্তা নিয়ে, যা হবে শান্তি, মানবতা এবং ভালোবাসার।
দুর্গাপুরের মানুষের ভালোবাসা
যাত্রার দিন সকাল থেকেই দুর্গাপুরের বিভিন্ন ক্লাব এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের বিদায় জানানো হয়। হিরোস ক্লাবের কর্মকর্তারা জানান, তাদের ক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে, তবে এই বাইক যাত্রাকে তারা একটি বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন এবং সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন। ক্লাবের কর্মকর্তা বলেন, "দুর্গাপুরের ইতিহাসে এটি একটি অনন্য যাত্রা, যা আমাদের গর্বিত করেছে।"
এই বাইক যাত্রা শুধুমাত্র শ্রমিকদের জন্য নয়, বরং সমগ্র দুর্গাপুরের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।