১৯৫৯ সালের আগস্ট মাসে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে খাদ্য আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ৮ই আগস্ট রাজ্য খাদ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩১শে আগস্ট বিভিন্ন সভা ও আইন অমান্য কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়।
৩১শে আগস্ট, বহু প্রতীক্ষিত দিনটি আসে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং সারাদিনের টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রচুর মানুষ উপস্থিত হন মনুমেন্ট ময়দানে। সেখানে কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও সমবেত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সভার পর প্রায় ৮-১০ হাজার ছাত্রের একটি বৃহৎ মিছিল মনুমেন্ট ময়দানে যোগ দেয়। সন্ধ্যা ৬:১০ মিনিটে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের এক বিশাল শোভাযাত্রা রাইটার্স বিল্ডিং-এর দিকে অগ্রসর হয়।
পুলিশের লাঠির আঘাতে ‘আন্দোলনকারীদের শিক্ষা’ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন এবং নিহত হন। পরের দিন, ১লা সেপ্টেম্বর, সারা পশ্চিমবঙ্গে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা মিছিল করে রাইটার্স বিল্ডিং-এর দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ গুলি চালায়, এবং চারজন ছাত্র নিহত হন। পরের দিন মেডিকেল কলেজে মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্তের পর, পুনরায় মিছিল হয় এবং আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মেডিকেল কলেজের ছাত্ররাও এগিয়ে আসে।
মেডিকেল কলেজে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ডাঃ জ্ঞানব্রত শীল এবং ডাঃ ইন্দ্রজিৎ রায়। ডাঃ জ্ঞানব্রত শীল মেডিকেল কলেজ হস্টেল স্টুডেন্টস্ ইউনিয়নের সম্পাদক ছিলেন। স্মৃতিচারণায় তিনি উল্লেখ করেছেন, "আমাদের প্রিন্সিপাল, প্রফেসর সুধীর বোস এসে কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন, ‘I HAVE NOT SEEN SUCH BRUTAL KILLING EVEN IN BRITISH PERIOD’। আমাদের হাসপাতালের একটি বুলেট-প্রুফ অ্যাম্বুলেন্স ছিল, এবং আমাদের প্রিন্সিপাল আমাদের কয়েকজনকে আহতদের সন্ধানে তা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।”
মূল লেখা থেকে সংগৃহীত: "আমরা মেডিকেল কলেজে পড়ি: সেকাল ও একাল" – সমুজ্জ্বল মাইতি (প্রকাশকাল: জুলাই, ২০১৮)