দুর্গাপুর: রাতের আঁধারে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের একটি ইউনিয়ন অফিসে, যেখানে মধ্যরাতের পরপরই সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। বেশ কিছুদিন ধরেই গোটা দুর্গাপুর শহরে গণআন্দোলনের উপর আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এবারের ঘটনা জনমনে আরো বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। প্রতিবাদ থামছে না, বরং দিন দিন তা তীব্রতর হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা শুধু পতাকা খুলে নেয়নি, বরং শহীদ বেদীও ভেঙে দিয়েছে। এমন একটি তাণ্ডবের ঘটনার পর শ্রমিক ও গণআন্দোলনের কর্মীরা সকাল থেকেই ইউনিয়ন অফিসের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন। স্থানীয় শ্রমিক নেতারা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন, এই ঘটনার প্রতিবাদে একটি ধিক্কার মিছিল আয়োজন করা হবে।
প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে দুর্গাপুরে
দুর্গাপুরের এই ১ নম্বর বিদ্যাসাগর এভিনিউ ইউনিয়ন দপ্তর ষাটের দশকে সংঘটিত আগস্ট আন্দোলনের একাধিক গৌরবময় মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে আছে। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল শ্রমিক আন্দোলনের অনেক উদ্যোগ। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই এই দপ্তর বারবার দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হয়েছে। তবুও, শ্রমিকরা কখনো পিছপা হননি; বরং প্রতিবারই তারা দপ্তরটি সাজিয়ে তুলে তাদের আন্দোলনের ঝান্ডা উঁচিয়ে ধরেছেন। এইবারও অন্যথা হয়নি।
বিকেলবেলা একটি গণজমায়েতের ডাক দেওয়া হয় ইউনিয়ন দপ্তরের সামনে। গণআন্দোলন কর্মীরা এবং শ্রমিকরা সেই জমায়েতে যোগ দেন এবং মিছিলের শুরুতেই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পতাকা উত্তোলন করেন শ্রমিক নেতা বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। স্টিল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পতাকা উত্তোলন করেন শ্রমিক নেতা ললিত মোহন মিত্র।
এক বিশাল মিছিল এবং রাজনৈতিক বার্তা
মিছিলটি ইউনিয়ন অফিস থেকে শুরু হয়ে দুর্গাপুরের প্রধান সড়ক ধরে নিউটন ফাঁড়ির সামনে দিয়ে চন্ডীদাস পর্যন্ত এগিয়ে যায়। মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন বহু মহিলা, যারা দুর্বার শক্তিতে আওয়াজ তোলেন, "দুষ্কৃতীরা যেখানেই হামলা চালাবে, সেখানেই হবে আমাদের প্রতিবাদ।"
মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন সিআইডি পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাধারণ সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, "যদি পুলিশ মনে করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করবে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। এই দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান এবং পুলিশকেও দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে।"
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, তৃণমূল সমর্থিত দুষ্কৃতীদের রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। তিনি দাবি করেন যে, পুলিশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের বাধা দিচ্ছে, যা তাদের নিরপেক্ষতার অভাব স্পষ্ট করে তোলে।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ
বংশগোপাল চৌধুরী আরও বলেন, "আমাদের আন্দোলন থামবে না। শ্রমজীবী মানুষের নেতৃত্বে আন্দোলন চলবে। যেখানেই কমরেডদের উপর আক্রমণ হবে, সেখানেই শুরু হবে নতুন লড়াই।"
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর দুর্গাপুরের ভিরিঙ্গি মোড় থেকে এক বিশাল মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে এই মিছিলে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ সংকল্প
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দুর্গাপুরে হিন্দুস্তান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের দপ্তরে হামলার পর এই প্রতিবাদ মিছিল বাম সমর্থকদের নতুন করে অক্সিজেন জোগাতে পারে। বিশেষ করে তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে এই মিছিলের আয়োজন আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দুর্গাপুরের বুকে এই মিছিলের তীব্রতা বাড়তে পারে, যা সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে পরিস্থিতি মোড় নেয়, সেটাই দেখার অপেক্ষা। তবে এক বিষয় স্পষ্ট, এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্রমিকদের প্রতিবাদী কণ্ঠ থামবে না, বরং আরও জোরালো হবে।