গুয়ান্তানামো, কিউবা:কিউবার এন্টোনিও গুইতেরাস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি। এন্টোনিও গুইতেরাস কেন্দ্রের জেনারেল ডিরেক্টর রুবেন কাম্পোস ওলমোস জানান, “কর্মীদের মধ্যে অসীম ইচ্ছাশক্তি ও দায়িত্ববোধ রয়েছে। যখনই তাদের ডাকি, পূর্ণাঙ্গ প্রতিক্রিয়া পাই। আমরা জানি যে সমস্যাগুলি অপেক্ষা করতে পারে না, তাই দিন-রাত এক করে নিরলস কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”
কিউবার বিদ্যুৎকর্মীরা সম্প্রতি জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পর দ্রুত পুনরুদ্ধারে প্রায় নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাদের এই কঠোর পরিশ্রমেই অন্ধকার থেকে দেশকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে। কিউবার শ্রমিকদের এই অনন্য ত্যাগ দেশের জনগণের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ সংকটের মাঝেই হারিকেন অস্কারের ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত কিউবা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। রবিবার, গুয়ান্তানামো প্রদেশে হারিকেনটি আঘাত হানে, যাতে বাড়িঘর ও শিল্পাঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। এই কঠিন সময়ে কিউবার শ্রমিক শ্রেণি ও সরকার মিলে একজোট হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবক, সাধারণ মানুষ ও সরকার মিলে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
আমরা এন্টোনিও গুইতেরাস তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করি, যেখানে জেনারেল ডিরেক্টর রুবেন কাম্পোস ওলমোস ও অভিজ্ঞ শ্রমিকরা কেন্দ্রটির কার্যক্রম, সংকটকালীন চ্যালেঞ্জ এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা নিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেন। গত ১০ বছর ধরে কেন্দ্রে কাজ করছেন ডিরেক্টর কাম্পোস, যিনি জানান, "শাটডাউনের আগে আমরা ৪৮ দিন স্থিতিশীলভাবে কাজ করেছি। তবে তেলের সরবরাহ বিলম্বিত হওয়ায় এবং হারিকেন অস্কারের আগমনে গুইতেরাস কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যা পুরো কিউবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।"
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং হারিকেনের কারণে জ্বালানির অভাবের পরিণতিতে কিউবায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থার একটি বড় ধাক্কা লাগে। দেশের বিদ্যুৎকর্মীরা এই সংকট মোকাবিলায় অবিরাম পরিশ্রম করে ছোট ছোট "আইল্যান্ড" জেনারেটর চালু করে, যা পুরো বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক পুনরায় সচল করতে সহায়ক। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিজে থেকে শুরু করতে না পারায়, জাতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র হাভানায় অবস্থান নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সমন্বিত করে।
কাম্পোস বলেন, “দেশের প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চারটি জ্বালানিবাহী জাহাজের প্রয়োজন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাধা দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে লেনদেনেও বিলম্ব ঘটছে, যা আমাদের জ্বালানির যোগানকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তবে আমাদের পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা শক্তিশালী কারণ এখানে জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একটি একক কমান্ডের অধীনে কাজ করে, যেখানে সরকার ও শ্রমিকরা সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এর ফলে আমরা দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছি।”
কিউবার এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে, শ্রমিক শ্রেণির আত্মত্যাগ ও একতাই জাতীয় পুনরুদ্ধার অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পরিচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে শ্রমিকদের অভিন্ন লক্ষ্য, ঐক্য এবং আত্মত্যাগের ফলেই কিউবার জনগণ বিদ্যুৎ পুনঃপ্রাপ্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও শ্রমিক শ্রেণির এই সংগ্রাম এবং সংকটে দেশকে পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা কিউবার সামাজিক ও জাতীয় শক্তির একটি অনন্য প্রতীক।