ভ্লাদিমির লেনিনের বিখ্যাত গ্রন্থ The State and Revolution-এ গণতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের সম্পর্ক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ উঠে এসেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র পুঁজিবাদের জন্য সর্বোত্তম রাজনৈতিক কাঠামো হিসেবে কাজ করে। এই কাঠামোর মধ্যে পুঁজির ক্ষমতা এতটাই সুসংহত হয় যে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করেও তা সহজে টলানো সম্ভব নয়।
গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পুঁজির ক্ষমতা
লেনিনের মতে, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামো যেখানে পুঁজিপতিরা তাদের ক্ষমতা সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে। পুঁজিপতিরা যখন এই কাঠামোর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তখন তা এতটাই মজবুত হয় যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই পুঁজিবাদ টিকে থাকে এবং আরও শক্তিশালী হয়।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে লেনিনের বক্তব্য
আধুনিক যুগে লেনিনের এই বিশ্লেষণ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। অনেক গণতান্ত্রিক দেশে পুঁজির প্রভাব স্পষ্ট। লবিং, নির্বাচনী প্রচারের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নীতি প্রণয়নে ধনীদের প্রভাব আজকের সময়ে এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তন নীতি এবং স্বাস্থ্যসেবার সংস্কারের মতো বিষয়ে ধনী কর্পোরেটদের প্রভাব বারবার উঠে আসে। লেনিনের কথার প্রতিধ্বনি এই যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও পুঁজিবাদের জন্য একটি মজবুত আশ্রয় হতে পারে।
ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি
লেনিনের সমালোচনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পুঁজিবাদ এবং গণতন্ত্রের এই সম্পর্ক ভাঙতে হলে কেবল রাজনৈতিক সংস্কার যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন অর্থনৈতিক কাঠামোর গভীর বিশ্লেষণ এবং সংস্কার। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রকৃত স্বার্থ রক্ষার জন্য পুনর্গঠন করার তাগিদ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
লেনিনের এই দৃষ্টিভঙ্গি আজও আমাদেরকে প্রেরণা দেয়, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য নতুনভাবে চিন্তা করার পথ দেখায়। তার ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়ে যেতে পারে।