কার্ল মার্কস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দাস ক্যাপিটাল–এর তৃতীয় খণ্ডে বণিক পুঁজিবাদ এবং অর্থমূলধনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শোষণ ও নিপীড়নের ভিত্তি তৈরি করেছে।
মার্কস দেখিয়েছেন, বণিক পুঁজিবাদ প্রধানত উৎপাদিত পণ্যের বিনিময় থেকে মুনাফা অর্জন করে এবং এতে উৎপাদনশীল শক্তির ওপর নির্ভরশীলতার তুলনায় শোষণমূলক ভূমিকা বেশি। বাণিজ্য ক্রমশ উৎপাদনকে বিনিময়-মূল্যের অধীন করে তোলে এবং ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে দেয়।
উৎপাদনের ওপর বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ
মার্কসের মতে, বণিক পুঁজিবাদ শুধুমাত্র উদ্বৃত্ত পণ্য নয়, পুরো উৎপাদন ব্যবস্থাকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়ায় এটি অর্থনীতিতে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, যেখানে পণ্যের বিনিময়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জিত হয়, কিন্তু নতুন উৎপাদন খুব কম হয়।
শোষণের নতুন পদ্ধতি
বণিক পুঁজিবাদ উন্নতিহীন সমাজগুলোর মধ্যে পণ্যের বিনিময়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করত। এই মুনাফা প্রায়ই প্রতারণা এবং ঠকানোর মাধ্যমে অর্জিত হতো। দাসমালিক, সামন্ত প্রভু, এবং প্রাচ্যের শাসকেরা বণিকদের প্রধান গ্রাহক ছিল, যারা ভোগবিলাসের জন্য উদ্বৃত্ত পণ্য কিনত।
সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনের সম্পর্ক
মার্কস দেখিয়েছেন যে বণিক পুঁজিবাদ সর্বদা লুণ্ঠন, দাস পাচার, এবং ঔপনিবেশিক দমননীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। কার্থেজ, রোম, ভেনিস, এবং পর্তুগিজ বা ডাচ উপনিবেশবাদীরা বণিক পুঁজিবাদের মাধ্যমে এই শোষণমূলক ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করেছে।
উৎপাদনের বাধাগ্রস্ততা
বণিক পুঁজিবাদের এই শোষণমূলক চরিত্র উৎপাদনশীল শক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। এটি একটি পরজীবী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে, যা সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মার্কসের এই বিশ্লেষণ বণিক পুঁজিবাদের প্রকৃতি এবং এর শোষণমূলক ভূমিকা নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এটি প্রমাণ করে যে, অর্থনৈতিক শোষণের মূলে বণিক পুঁজিবাদ কীভাবে দমনমূলক ব্যবস্থা তৈরি করেছে।