সম্প্রতি ফ্রান্সের আদালতে জিসেল পেলিকোতের একটি মর্মান্তিক মামলার শুনানি শুরু হয়েছে, যা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রায় এক দশক ধরে তার প্রাক্তন স্বামী তাকে মাদকাসক্ত করে অন্য পুরুষদের কাছে ধর্ষণের জন্য তুলে দেন এবং নিজেও বারবার তাকে নির্যাতন করেন। বর্তমানে এই প্রাক্তন স্বামীসহ আরও ৫০ জন অভিযুক্ত আদালতের মুখোমুখি হয়েছেন। অভিযুক্ত স্বামী ইতোমধ্যেই তার সমস্ত অপরাধ স্বীকার করেছেন।
এই ঘটনা নারীদের প্রতি সহিংসতার এক ভয়াবহ উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের প্রতি সহিংসতা আজও বিশ্বব্যাপী এক তীব্র সমস্যা। জার্মানির পরিবার, প্রবীণ, নারী ও যুব বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (BMFSFJ) তথ্য অনুসারে, জার্মানিতে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে দুইজন তাদের জীবনে অন্তত একবার যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এছাড়া প্রতি চারজনের একজন শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হন, যা তাদের সঙ্গী বা প্রাক্তন সঙ্গীর দ্বারা সংঘটিত হয়।
সহিংসতার কারণে প্রতি সাতজনের একজন গুরুতর যৌন সহিংসতার শিকার হন। কিন্তু অনেক ঘটনা থেকে যায় অজানা, কারণ ভুক্তভোগীরা প্রায়ই অভিযোগ জানাতে ভয় পান।
নারীদের প্রতি সহিংসতার শেষ পরিণতি কখনো কখনো মৃত্যু। ২০২৩ সালে জার্মানিতে প্রতিদিন গড়ে একজন নারী তার সঙ্গী বা প্রাক্তন সঙ্গীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। মোট ৩৬০ জন নারী এই বর্বরতার শিকার হন। তবে "ফেমিসাইড" বা নারী হওয়ার কারণে হত্যাকে এখনও জার্মানির আইনে পৃথক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।
নারীদের প্রতি সহিংসতা কেবল শারীরিক নয়, এটি তাদের মানসিক ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। সহিংসতার শিকার ৫৬% থেকে ৮০% নারী মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এসব সমস্যার মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত, আত্মবিশ্বাসের অভাব, উদ্বেগ, হতাশা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চিন্তা ও আত্ম-আঘাত অন্তর্ভুক্ত।
এই পরিস্থিতিতে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্বজুড়ে দাবি জোরদার হচ্ছে। নারীর অধিকার রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।