১৯৭৮ সালে সাওর বিপ্লবের মাধ্যমে মোহাম্মদ দাউদ খানের সরকার উৎখাতের পর প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ আফগানিস্তান (১৯৭৮-১৯৮৭) এবং পরবর্তী রিপাবলিক অফ আফগানিস্তান (১৯৮৭-১৯৯২) সময়ে নারীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কমিউনিস্ট শাসন নারী অধিকার ও সমতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে আসে। নূর মোহাম্মদ তারাকির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট সরকার নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়।
এই সরকারের অধীনে নারীদের সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। নারীরা নিজেদের পেশা ও জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা পায়, এবং তাদের সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য **ডেমোক্র্যাটিক উইমেনস অর্গানাইজেশন অফ আফগানিস্তান (ডিওডাব্লিউএ)** এবং **আফগান উইমেনস কাউন্সিল (এডব্লিউসি)** গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ১,৫০,০০০ সদস্যের এডব্লিউসি, মাসুমা এসমাতি-ওয়ার্দাকের নেতৃত্বে নারীদের জন্য বিভিন্ন সামাজিক ও কর্মসংস্থানমুখী প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে, যা সেক্রেটারিয়াল কাজ, হেয়ারড্রেসিং এবং উৎপাদন খাতে নারীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কমিউনিস্ট সরকার গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকায় নারীদের অধিকারের প্রসারে উদ্যোগী ছিল। গ্রামাঞ্চলে পিতৃতান্ত্রিক প্রথা বিলুপ্ত করে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ নির্ধারণ করা হয় এবং বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়। তবে এই উদ্যোগে গ্রামীণ রক্ষণশীল সমাজ বিশেষ করে পশতুন এলাকায় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যেখানে নারীর শিক্ষা গ্রহণকে সামাজিক অসম্মানের চোখে দেখা হতো। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক স্বাধীনতার প্রসার এই সময়ে ইসলামি গেরিলা গোষ্ঠী **মুজাহিদিনের** বিদ্রোহী আন্দোলনকে উৎসাহিত করে, যারা এই শিক্ষানীতিকে কমিউনিস্ট এবং ধর্মবিরোধী বলে মনে করত।
সত্তরের দশকের শেষের দিকে ও আশির দশকের শুরুতে কমিউনিস্ট সরকারের অধীনে হাজারো শহুরে নারী পার্টি ও মিলিশিয়ায় যুক্ত হয়ে মুজাহিদিন বিরোধী সংঘর্ষে প্রশিক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই শঙ্কিত ছিল যে কমিউনিস্ট শাসন শেষ হলে নারীদের অধিকারও বিলুপ্ত হতে পারে। ১৯৮৭ সালে জাতীয় পুনর্মিলন আলোচনার সময় এডব্লিউসির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। ১৯৯১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় সাত হাজার নারী উচ্চশিক্ষায় এবং ২,৩০,০০০ মেয়ে বিভিন্ন স্কুলে পড়াশোনায় যুক্ত ছিল। আফগানিস্তানের শিক্ষা খাতে ১৯০ জন নারী অধ্যাপক এবং ২২,০০০ নারী শিক্ষক কর্মরত ছিলেন, যা নারীর ক্ষমতায়নের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।
এই সময়কালে আফগানিস্তানে নারীদের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহ দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে জড়িয়ে ছিল।