" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory সিরিয়ায় নৈরাজ্য: বাশার আল-আসাদের অপসারণের পর সন্ত্রাস ও অরাজকতার করাল গ্রাস //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

সিরিয়ায় নৈরাজ্য: বাশার আল-আসাদের অপসারণের পর সন্ত্রাস ও অরাজকতার করাল গ্রাস

 


দামেস্ক, সিরিয়া – ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর সিরিয়া এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। একসময় যেই দেশটি শান্তি, সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক ছিল, সেটি আজ সন্ত্রাস ও অরাজকতার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দেশটির সাধারণ মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে, সম্পদ লুটপাট চলছে, এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর শাসন মানুষের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

আসাদের শাসন: এক সময়ের স্বর্ণযুগ

বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তার শাসনামলে সিরিয়া ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করত। সুন্নি, শিয়া, খ্রিস্টান, আলাওয়াইট, কুর্দি এবং আর্মেনীয়দের মধ্যে সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত ছিল।



আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আসাদ ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ফ্রান্স তাকে "লিজিয়ন অফ অনার" পদক দিয়েছিল, এবং ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এমনকি মার্কিন প্রতিনিধি ন্যান্সি পেলোসি সিরিয়া সফর করেছিলেন। ২০০৯ সালের একটি সার্ভে তাকে আরব বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।



আসাদ নিজে দামেস্কের রাস্তায় হাঁটতেন এবং নিজেই গাড়ি চালিয়ে শহর ঘুরে বেড়াতেন। তার শাসনামলে সিরিয়ায় কোনো আল-কায়েদা, মুসলিম ব্রাদারহুড বা শরিয়া আইনের অস্তিত্ব ছিল না।



আরব বসন্ত এবং সংকটের সূচনা

২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়াতেও আঘাত হানে। তবে অন্যান্য দেশের মতো এখানে আন্দোলন সহজে সফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা সিরিয়ার সরকার উৎখাতের জন্য তথাকথিত "মডারেট বিদ্রোহীদের" সমর্থন দেয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, এই বিদ্রোহীরা প্রকৃতপক্ষে আল-কায়েদা এবং আইএসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত।



যুক্তরাষ্ট্র "অপারেশন টিম্বার সাইকামোর" নামে একটি প্রকল্প শুরু করে, যার মাধ্যমে সিরিয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ছিল ট্যাঙ্ক, রকেট, মর্টার এবং অন্যান্য শক্তিশালী অস্ত্র। এই অস্ত্রগুলো আল-কায়েদা ও আইএসের হাতে পড়ে, যারা সিরিয়ার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অকথ্য নির্যাতন চালায়।



২০১২ সালে আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি সিরিয়ার বিরুদ্ধে "জিহাদ" ঘোষণা করেন। একই দিনে মার্কিন সরকার একটি ইমেইলে উল্লেখ করে, "আল-কায়েদা সিরিয়ায় আমাদের পক্ষ অবলম্বন করেছে।"

আসাদের অপসারণের ফলাফল

বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সিরিয়া কার্যত সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যায়। আজ সিরিয়া একটি বিভক্ত রাষ্ট্র, যেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিদিন দেশে হত্যা, লুটপাট, এবং ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।

আইএস এবং আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার ঐতিহাসিক মসজিদ, গির্জা এবং অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা শিয়া, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করছে।

সিরিয়ার জনগণের প্রত্যাশা

আজ সিরিয়ার মানুষ সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করে, যখন আসাদের নেতৃত্বে দেশটি শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক ছিল। আসাদের সময়ের সেই ঐক্য আর নিরাপত্তা এখন কেবলই অতীতের স্মৃতি।



বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভুল সিদ্ধান্ত এবং তথাকথিত "মডারেট বিদ্রোহীদের" সমর্থন সিরিয়াকে এই নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আসাদের শাসনামলে যে সিরিয়া একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল, তা আজ সন্ত্রাসের করাল গ্রাসে ধ্বংসপ্রায়।

সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা এক দুঃখজনক উদাহরণ, যেখানে একটি সুশাসিত রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী সমর্থনের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হলেও, দেশটির জনগণ আশা করছে, একদিন তারা আবার শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে।

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies