১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, মানব ইতিহাসের এক নির্মম অধ্যায়ের সূচনা হয় যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম পরমাণু বোমা হামলা চালায়। "লিটল বয়" নামে পরিচিত এই বোমার বিস্ফোরণে শহরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, নিহত হয় প্রায় এক লক্ষ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি কেবল জাপানের প্রতি আঘাত ছিল না, বরং সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য একটি কৌশলগত বার্তা ছিল, যার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পরমাণু শক্তি প্রদর্শন করে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৩ সাল থেকেই পরমাণু গবেষণার কাজে নিযুক্ত ছিল। তবে হিরোশিমা বোমা হামলা তাদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রগতি অনেক বেশি বলে প্রমাণিত হয়। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায়, ১৪ আগস্ট ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত সরকারের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ল্যাভ্রেন্টি বেরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে ছিলেন বিজ্ঞানী ইগর কুরচাতভ, পিওত্র কাপিত্সা এবং অন্যান্য শীর্ষ বিশেষজ্ঞরা।
কমিটির প্রধান দায়িত্ব ছিল পরীক্ষামূলক পরমাণু চুল্লি নির্মাণ ও প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের পথ সুগম করা। জার্মানির যুদ্ধজয়ের সময় সংগৃহীত ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে মাত্র এক বছরের মধ্যেই একটি পরীক্ষামূলক চুল্লি তৈরি সম্ভব হয়। ২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৬ সালে ইগর কুরচাতভের নেতৃত্বে "এফ-১" চুল্লির সফল প্রয়োগ ঘটানো হয়, যা সোভিয়েত পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সোভিয়েত ইউনিয়নের এই অর্জন তাদের পরমাণু অস্ত্র উন্নয়নের সক্ষমতা বাড়ায় এবং বিশ্বের শক্তির ভারসাম্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে হিরোশিমার ঘটনা আজও মানবতার প্রতি একটি সতর্কবার্তা বহন করে, যা পরমাণু অস্ত্রের বিপদ সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে।