বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। সেই দিনটি থেকেই প্রতিবছর এই দিনটি জাতীয় সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ভারতের বামপন্থী শক্তি। দিনটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেই সিপিআইএম দুর্গাপুরের ইস্পাত অঞ্চলের তিনটি এরিয়া কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এক বিশাল সমাবেশ।
সমাবেশের স্থান ও পরিবেশ
দুর্গাপুরের শ্রমজীবী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আশীষ জব্বর স্মৃতি ভবনের সংলগ্ন ময়দানে আয়োজিত এই সমাবেশ শীতের সন্ধ্যায় উত্তাপ ছড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও বামপন্থী সমর্থকরা এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি এবং ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব ঐশী ঘোষ।
সমাবেশের সূচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সমাবেশের সূচনা হয় গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। সংগীত পরিবেশন করেন লহরী এবং গণনাট্য সংঘের ইস্পাত শাখা। তাদের সংগীত উপস্থিত সবাইকে উজ্জীবিত করে। এই সাংস্কৃতিক পর্বের মাধ্যমে সমাবেশের মূল বার্তা—সংহতি, সাম্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব—স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সভাপতি ও বক্তাদের বক্তব্য
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা বিশ্বরূপ বন্দোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা ললিত মোহন মিশ্র, যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি, এবং ছাত্র নেত্রী ঐশী ঘোষ।
মীনাক্ষী মুখার্জি তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "ধর্মের মোড়কে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু জীবন-জীবিকার প্রশ্নে মানুষকে একত্রিত করাই আমাদের আসল লক্ষ্য। বামপন্থীরা সবসময় সমাজের অবিচার এবং পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে।"
তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নিয়েও কথা বলেন। "এই দেশ কিংবা বাংলাদেশ—সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে পুঁজিপতিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে," তিনি বলেন।
নারী নিরাপত্তার বিষয়ে দুই সরকারকেই সমালোচনা করে তিনি বলেন, "নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। বরং যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু বামপন্থীরা কখনও রাস্তা ছাড়ে না, আর ছাড়বেও না।"
ছাত্র নেত্রী ঐশী ঘোষ তাঁর বক্তব্যে বিজেপি-র ধর্মীয় বিভাজনের নীতির কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন তৈরি করে দেশে বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে মানুষের সার্বিক ঐক্য গড়ে তোলার সময় এসেছে।"
সমাবেশের গুরুত্ব ও বার্তা
সমাবেশের প্রতিটি বক্তব্য এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনা জনগণকে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে উৎসাহিত করেছে। সমাবেশটি শুধু একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়, বরং এটি ছিল জনগণকে নতুন দিশা দেখানোর একটি প্রয়াস।
৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে বামপন্থী শক্তি ধর্মনিরপেক্ষতা ও সামাজিক ন্যায়ের জন্য তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। বক্তাদের বক্তব্য এবং সমাবেশের মূল সুর ছিল একটাই—সমাজের সব স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে জয় সম্ভব নয়।