২৫শে ডিসেম্বর, ভারতের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে, ১৯২৭ সালে, ভারতরত্ন ড. বাবাসাহেব আম্বেদকর মনুসংহিতা পুড়িয়েছিলেন। মনুসংহিতা, যা ছিল ব্রাহ্মণবাদী সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি, বর্ণভেদের প্রথা এবং শূদ্র, দলিত, দাসদের শোষণ ও নিপীড়নের পক্ষে এক শাস্ত্রগ্রন্থ হিসেবে পরিচিত। এই শাস্ত্রগ্রন্থে যে বিভাজন ছিল তা ভারতীয় সমাজকে শোষণ ও বর্ণগত বৈষম্যে আবদ্ধ করেছিল।
এবার, এই দিনটিকে স্মরণ করে, পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলার বগুলায় ‘নাস্তিক মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন মনুসংহিতা দহন দিবস পালন করেছে। সংগঠনের সদস্যরা এই উপলক্ষে মনুসংহিতা পুড়িয়ে, স্লোগান দিয়েছেন: “ব্রাহ্মণবাদী সিস্টেমের বিরুদ্ধে, বর্ণভেদ প্রথার সম্পূর্ণ অবসান চাই।” তাদের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট— “আমরা আমাদের দেশের সংবিধান রক্ষা করতে চাই, যেখানে সব নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে।”
নাস্তিক মঞ্চের সদস্যরা আরও বলেন, “মনুসংহিতা পড়ে মানুষ শিক্ষা লাভ করেনি, বরং সমাজের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষকে শূদ্র, দলিত, অচ্ছুত বানিয়ে রেখে একটি ভয়ঙ্কর সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ ও সংগ্রাম চলবে।”
বাবাসাহেব আম্বেদকর ১৯২৭ সালের ২৫শে ডিসেম্বর, তার বৃহত্তম সংগ্রামের অংশ হিসেবে মনুসংহিতা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন, যা তখনকার সমাজ ব্যবস্থার প্রতি এক মহা প্রতিবাদ ছিল। আম্বেদকরের এই পদক্ষেপ ছিল একটি সপক্ষে বার্তা, যে আমাদের সমাজকে একাত্মতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে সকল মানুষকে সমান মর্যাদা দেওয়া হবে।
আজকের এই মনুসংহিতা দহন দিবসে, পশ্চিম বাংলার বগুলায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণকারী সকলে একমত হয়ে বলেন, “মনুসংহিতা ও ব্রাহ্মণবাদী সিস্টেমের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, যাতে আমাদের সমাজ বিভাজন ও বর্ণভেদ মুক্ত হয়।"
অতএব, আজকের দিনটি শুধু স্মৃতিচারণের নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক সংগ্রামের পুনরুজ্জীবন। সকল মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এই আন্দোলন আরো বৃহত্তর হবে, এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা।