বিশ্বজুড়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং বৈষম্যের শিকড় প্রায়ই ধর্ম এবং বর্ণের আধিপত্যবাদের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। ইতিহাস থেকে বর্তমান পর্যন্ত, এই দুই শক্তি বিভিন্ন ভূখণ্ডে ভিন্ন আকারে প্রভাব বিস্তার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতবর্ষ পর্যন্ত এই প্রবণতা অব্যাহত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণের আধিপত্যবাদ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ বহুদিন ধরে একটি বিতর্কিত ও জটিল সমস্যা। এই বর্ণবাদ শুধু গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করেই নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ের মাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা নিজেদের খ্রিস্টান হিসেবে পরিচিত করলেও তাদের আচরণ ও কার্যকলাপ প্রকৃত খ্রিস্টীয় মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক।
জর্জ ফ্লয়েডের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ২০২০ সালে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটায়। “ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার” আন্দোলন আমেরিকার বর্ণ বৈষম্যের কুফলগুলোকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে। এ ঘটনাগুলো দেখায় কিভাবে বর্ণবাদ মার্কিন সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত।
মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মীয় আধিপত্য এবং সংঘর্ষ
মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে ধর্মীয় আধিপত্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই অঞ্চলে শিয়া এবং সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে দীর্ঘকালীন সংঘর্ষ একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। যদিও সংঘর্ষের প্রধান কারণ ধর্মীয় বিভেদ, অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
মধ্যপ্রাচ্যে তেল সম্পদ নিয়ে ক্ষমতার লড়াই শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষকে আরও গভীর করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেন, সিরিয়া এবং ইরাকে এই সংঘাতের দৃষ্টান্ত দেখা যায়, যেখানে ধর্ম এবং অর্থনীতির সংমিশ্রণ নতুন সংকট তৈরি করেছে।
ভারতে হিন্দুদের মধ্যে বর্ণ বৈষম্য
ভারতে বর্ণ আধিপত্যবাদ একটি সামাজিক ব্যাধি। এখানে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেই উচ্চ এবং নিম্ন বর্ণের বিভাজন স্পষ্ট। উচ্চবর্ণের কিছু অংশ প্রাচীনকাল থেকে দলিত, শূদ্র, এবং অন্যান্য নিম্নবর্ণের মানুষদের উপর বৈষম্য চালিয়ে আসছে।
ভারতীয় সমাজে বর্ণবাদের শিকড় এতটাই গভীর যে, এটি ধর্মের চেয়েও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দলিতদের প্রতি সহিংসতা, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বঞ্চনা এই সমস্যার কিছু উদাহরণ। যদিও সংবিধান দলিতদের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে, বাস্তবিক পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক।
উপসংহার
ধর্ম এবং বর্ণের আধিপত্যবাদ শুধুমাত্র সামাজিক বৈষম্যের কারণ নয়, বরং এটি বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামোতেও গভীর প্রভাব ফেলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদ, মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি সংঘাত এবং ভারতে বর্ণ বৈষম্য—এই তিনটি উদাহরণ দেখায় যে, আধিপত্যবাদের রূপ বিভিন্ন সমাজে ভিন্ন ভিন্ন হলেও তার ফলাফল সর্বত্রই ধ্বংসাত্মক।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হলে কেবল আইন নয়, সামাজিক সচেতনতা এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনেরও প্রয়োজন। ধর্ম ও বর্ণের পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া সময়ের দাবি।