২১ ডিসেম্বর, বুরকিনা ফাসো জাতীয়ভাবে স্মরণ করছে থমাস সাঙ্কারার জন্মদিন। ১৯৫২ সালে জন্ম নেওয়া সাঙ্কারা ছিলেন এক অটল কম্যুনিস্ট নেতা, যিনি শুধু বুরকিনা ফাসোই নয়, বরং পুরো আফ্রিকার জন্য নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং একটি স্বাধীন, আত্মনির্ভরশীল ভবিষ্যতের সংগ্রাম করেছিলেন।
থমাস সাঙ্কারা ১৯৮৩ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ক্ষমতায় আসেন এবং তাঁর নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসো তার ঐতিহাসিক পরিবর্তনের যাত্রা শুরু করে। তিনি দেশের নাম পরিবর্তন করেন 'আপার ভল্টা' থেকে 'বুরকিনা ফাসো', যার মানে ‘সৎ মানুষের দেশ’। এটি ছিল তার কম্যুনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রকাশ।
সাঙ্কারা বিশ্বাস করতেন যে, আফ্রিকার প্রকৃত মুক্তি তখনই সম্ভব, যখন তার জনগণ আত্মনির্ভরশীল হবে এবং বাইরের শক্তির ওপর নির্ভরতা কমানো হবে। তার সময়ে, বুরকিনা ফাসো কৃষি উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে অগ্রসর হয়েছিল।
তিনি দারিদ্র্য ও অসাম্য দূর করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। জমি সংস্কার, নারীদের অধিকারের স্বীকৃতি, এবং আফ্রিকান পণ্য ব্যবহারের প্রচারণা তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি ছিল। তিনি আফ্রিকান জনগণকে নিজেদের শক্তি এবং সম্পদে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করেছিলেন।
থমাস সাঙ্কারা পশ্চিমি শক্তির সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বলেছেন, "যে আপনাকে খাবার দেয়, সে আপনাকে নিয়মও বেঁধে দেয়।" তিনি আফ্রিকান পণ্য কেনা এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
সাঙ্কারা তাঁর ছোট গাড়ি এবং সাধারণ জীবনযাত্রার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। তাঁর অফিসে কোনো বিলাসিতা ছিল না এবং তাঁর বেতন ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি তার দেশকে আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে সাঙ্কারা হত্যার শিকার হন, তবে তার আদর্শ এবং সংগ্রাম আজও বেঁচে আছে। তাঁর জন্মদিন আজও এক প্রেরণাদায়ক উদযাপন হয়ে থাকে, যা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সাঙ্কারা ছিলেন এক সত্যিকারের কম্যুনিস্ট নায়ক, যিনি আফ্রিকার মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন।