সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং সন্ত্রাসবাদের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা একটি দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ। ২০১১ সালে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন শুরু হলে, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটকে তার নিজস্ব রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে ব্যবহার করে। সিআইএ এই সময় থেকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের জন্য অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে এবং প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে প্রশিক্ষণের জন্য।
এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই আল-কায়েদা ও আইএসআইএস-এর মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। সিরিয়ায় পরিচালিত এই গোপন কার্যক্রমটি পরিচিত "অপারেশন টিম্বার সাইকামোর" নামে। এটি একটি গোপন কর্মসূচি, যা যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত করেছিল সিরিয়ার ধর্মনিরপেক্ষ সরকারকে দুর্বল করার জন্য। এই সরকার রাশিয়া এবং ইরানের মিত্র হওয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চল থেকে তাদের প্রভাব নির্মূল করতে চেয়েছিল।
অর্থনৈতিক যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা সিরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধু সিরিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বলই করেনি, বরং সাধারণ জনগণের জীবনকেও বিপন্ন করেছে। খাবার, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি আলোচনায় বসেছিল। এতে তারা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্ত হিসেবে ইরানের সঙ্গে তার মিত্রতা ভাঙা এবং লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি জানায়। এটি দেখায় যে সিরিয়ার সংকট শুধুমাত্র একটি গৃহযুদ্ধ নয়, বরং বড় শক্তিগুলোর কৌশলগত আধিপত্যের লড়াই।
মানবিক সংকট ও যুদ্ধের প্রকৃত চিত্র
এই যুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক বা কৌশলগত নয়, এর পেছনে রয়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। সিরিয়ার শিশুরা খাদ্য ও আশ্রয়ের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধের কারণে বহু পরিবার ভেঙে পড়েছে।
যখন আপনি সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন কেবল একটি গৃহযুদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং ক্ষমতার রাজনীতির বিষয়টি বিবেচনা করুন। বিশেষ করে হায়াত তাহরির আশ শামের (HTS) মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন করার আগে ভেবে দেখুন, আপনি আসলে কার পক্ষ নিচ্ছেন এবং কাদের জন্য আপনার সমর্থন কাজ করছে।
সিরিয়ার পরিস্থিতি কেবল এক দেশের অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক শক্তির একটি রাজনৈতিক যুদ্ধের অংশ। সময় এসেছে সত্যটা বোঝার এবং এই সংকট সমাধানের জন্য সঠিক নীতি গ্রহণের।