১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে, ভারতের সাহসী পদক্ষেপে গোয়া, দমন ও দিউ মুক্তির সময় রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থন ভারতের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা লিওনিড ব্রেজনেভের এই সমর্থন ভারতের উপনিবেশ-উত্তর যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে।
পূর্ববর্তী আলোচনা ও পর্তুগালের প্রত্যাখ্যান
১৯৫০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ভারত পর্তুগিজ উপনিবেশগুলোর বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু পর্তুগাল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, দাবি করে যে এই অঞ্চলগুলো পর্তুগিজ মহানগরের অংশ এবং ভারতের স্বাধীনতার আগেই এগুলো অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।
পর্তুগালের ওপর ভারতীয় নিষেধাজ্ঞা
১৯৫৪ সালে, ভারত গোয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং পর্তুগালের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে দাদরা ও নগর হাভেলির পর্তুগিজ বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। ১৯৬১ সালে, পর্তুগাল ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে অস্বীকৃতি জানায় এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও ক্যাথলিক সংস্কৃতির অজুহাতে গোয়া, দমন ও দিউ হস্তান্তর করতে রাজি হয়নি।
গোয়ার মুক্তিতে সোভিয়েত সমর্থন
১৫ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে লিওনিড ব্রেজনেভ দিল্লি সফরে এসে ভারতের উপনিবেশবিরোধী পদক্ষেপকে সমর্থন জানান। এক বিশাল সমাবেশে তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর বিরোধিতাকে উপেক্ষা করতে ভারতীয়দের আহ্বান জানান এবং এটিকে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত জাতিগুলোকে চুপ করানোর প্রচেষ্টা বলে উল্লেখ করেন। তার শক্তিশালী অবস্থানের ফলে ন্যাটো পর্তুগালকে সাহায্য করতে পারেনি।
সোভিয়েত ভেটো ও ভারতের সফল অভিযান
১৮ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে আনীত প্রস্তাবে ভেটো দেয়। সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ ভারতের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুকে বার্তা পাঠান।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিত "অপারেশন বিজয়" এর মাধ্যমে গোয়া, দমন ও দিউ মুক্ত করে। ব্রেজনেভ এই পদক্ষেপকে ন্যায্য অভিহিত করে বলেন, এটি উপনিবেশবাদের অবশেষ নির্মূল করার সঠিক পদক্ষেপ।
উপনিবেশমুক্ত ভারতের পূর্ণতা
১৯৬৩ সালে সোভিয়েত সমর্থনে ভারত ফ্রান্সের অধীনস্থ অঞ্চলগুলোও একীভূত করে। অবশেষে, ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে পর্তুগাল ভারতীয় অঞ্চলগুলোর ওপর তাদের দাবি ত্যাগ করে এবং একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে। এর ফলে পর্তুগালের ৪৫০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
গোয়ার মুক্তিতে ভারতের এই সাহসী পদক্ষেপ শুধু ইতিহাসে একটি বিজয়ের গল্পই নয়, বরং এটি স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত জাতিগুলোর জন্য একটি অনুপ্রেরণাও।