বাংলাদেশে আইনের শাসন বিলুপ্ত হয়েছে এবং ন্যায়বিচার আজ দুঃস্বপ্ন ও উপহাসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মাদ আলী আরাফাত, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিচারব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে এটি একটি রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এর ফলে দেশের আইনজীবীরা চুপ করে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এবং আইনিভাবে সুরক্ষা পাওয়ার প্রতিটি পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান শাসনব্যবস্থা একটি ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী রূপ নিয়েছে। এ সরকার আইনের শাসনের প্রতীক হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার চেষ্টাও করে না। তিনি বলেন, "আজ এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যেখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই।"
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, "অপরাধীদের বিভৎস স্বীকারোক্তি এবং অকাট্য প্রমাণ সত্ত্বেও বিচারিক আদালত থেকে মামলার সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বিচার বিভাগ আজ সম্পূর্ণ বিকৃত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছে।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চট্টগ্রামে চিন্ময় দাসের মামলায় আইনি সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার জন্য ৭০ জন হিন্দু আইনজীবীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। ঢাকার আইনজীবীরা হস্তক্ষেপ করতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সহিংসতার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে জামিনের আবেদন দাখিল করার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও ভুক্তভোগীরা বঞ্চিত হন।
তিনি উদাহরণ হিসেবে দেশের সুশীল সমাজের কর্মী শারিয়ার কবিরের ঘটনাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, শারিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে একাধিক বানোয়াট অভিযোগ এনে তাকে কারাগারে ন্যায়সংগত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও তার বিভাগীয় মর্যাদা অস্বীকার করা হয়েছে।
মোহাম্মাদ আলী আরাফাত বলেন, "বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর দাবী, ‘যে কেউ মামলা করতে পারে এবং আমরা তাদের থামাতে পারি না’, এটি মিথ্যা এবং নির্লজ্জ। বাস্তবতা হলো, হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘু ভুক্তভোগী ন্যায়বিচারের জন্য একটি মামলাও করতে পারছেন না।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আগে কখনোই নিখুঁত ছিল না, কিন্তু বর্তমানে এটি রাজনৈতিক নিপীড়নের এক ভয়ংকর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। "এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আধুনিক বিশ্বের যেকোনো আইনি ব্যবস্থার জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।"
বাংলাদেশে বর্তমানে ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের জনগণের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা ক্রমেই হ্রাস পাবে এবং এটি একটি বড় জাতীয় সংকটে রূপ নিতে পারে।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধারে সকল পক্ষের সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন এখন সময়ের দাবি।