কলকাতা: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, যিনি ভারতীয় জনসংঘের (বর্তমান বিজেপি) প্রতিষ্ঠাতা এবং হিন্দু মহাসভার এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন, তার ডায়েরি “লিভস ফ্রম এ ডায়েরি”-তে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে “দেশদ্রোহী” এবং “হিন্দুবিরোধী” বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তার এই মন্তব্যকে ঘিরে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার ডায়েরিতে লিখেছিলেন, “সুভাষ চন্দ্র বসু এবং শরৎ চন্দ্র বসু দুজনেই চরম দেশদ্রোহী এবং হিন্দুবিরোধী।”
ডায়েরি অনুযায়ী, যখন কংগ্রেস দল দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল—প্রো-নেতাজি এবং অ্যান্টি-নেতাজি—তখন মুখোপাধ্যায় প্রকাশ্যে অ্যান্টি-নেতাজি গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি আরও লেখেন, “আমরা নেতাজির বিরোধিতা করেছিলাম, শুধু কংগ্রেসের ওই গোষ্ঠীকে ভালবেসে নয়, বরং নেতাজির বিরুদ্ধে লড়াই করার একমাত্র শক্তি আমাদেরই ছিল।”
ডায়েরিতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে নেতাজির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময়কার সাংবাদিক মাখন সেন হিন্দু মহাসভার পক্ষ নিয়ে নেতাজির বিরোধিতায় সমর্থন দিয়েছিলেন।
নেতাজি যখন ব্রিটিশদের তৈরি হোলওয়েল মনুমেন্ট ভাঙার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং গ্রেফতার হন, তখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার গ্রেফতারকে “শুভ লক্ষণ” বলে আখ্যায়িত করেন।
বিতর্কের সূত্রপাত
বর্তমানে সংঘ পরিবার নেতাজির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দাবি জানালেও এই ডায়েরির তথ্য উন্মোচন করে যে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তার সমালোচক ছিলেন এবং তাকে সরাসরি “দেশদ্রোহী” বলেও উল্লেখ করেছিলেন।
এদিকে, এক সময়ের জনপ্রিয় কমিউনিস্ট পত্রিকা পিপলস ওয়ার-এর বিরোধিতা করে সংঘ পরিবার দাবি করে যে কমিউনিস্টরা নেতাজিকে “তোজোর কুকুর” বলেছিল। কিন্তু মুখোপাধ্যায়ের ডায়েরি প্রকাশ্যে আসার পর, সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন: কেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নেতাজিকে “হিন্দুবিরোধী” ও “দেশদ্রোহী” বলার জন্য কখনো প্রশ্ন করা হয়নি?
ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ
ইতিহাসবিদদের মতে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং সুভাষ চন্দ্র বসুর মধ্যে আদর্শিক মতপার্থক্য ছিল। একদিকে নেতাজি সর্বধর্ম সমন্বয় ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার পক্ষে ছিলেন, অন্যদিকে মুখোপাধ্যায় হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। এই মতাদর্শগত বিভাজনের কারণেই এমন মন্তব্য উঠে আসে।
নেতাজির সমর্থকরা দাবি করছেন, শ্যামাপ্রসাদের এই ধরনের মন্তব্য জাতির প্রতি নেতাজির অসামান্য অবদানের প্রতি অবমাননাকর। এই বিতর্ক নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক সত্য খুঁজে দেখার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হয়ে উঠেছে।