সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, রাশিয়া এক নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করে। গণতন্ত্র ও মুক্তবাজারের নামে প্রচারিত এই রূপান্তর প্রক্রিয়া বাস্তবে ছিল একটি সুপরিকল্পিত সম্পদ লুটের উদাহরণ। "গ্রাবিটাইজেশন" নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ কয়েকজন বিশেষ সুবিধাভোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়, যাঁদের সঙ্গে পশ্চিমা কর্পোরেশনগুলোর গভীর সম্পর্ক ছিল।
সম্পদের মালিকানা বদল:
আনাতোলি চুবাইসের নেতৃত্বে রাশিয়ার বেসরকারিকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব বড় শিল্প ও প্রাকৃতিক সম্পদ কয়েকজন অভিজাত ব্যক্তির হাতে চলে যায়। এই প্রক্রিয়া "সবার জন্য সমান সুযোগ" বলে দাবি করা হলেও, আসলে এর সুবিধা পেয়েছে তারা, যারা পশ্চিমা সংস্থাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিল।
কাদের হাতে গেল সম্পদ?
১. মিখাইল খোদোরকভস্কি (ইউকোস):
রকফেলার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা খোদোরকভস্কি রাশিয়ার তেল খাতের বড় অংশ এক্সনমোবিল ও শেভরনের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালে তার গ্রেপ্তারের ফলে এই প্রক্রিয়া থেমে যায়।
২. বরিস বেরেজভস্কি:
ব্রিটিশ কোম্পানি ও অফশোর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বেরেজভস্কি রাশিয়ার বিভিন্ন শিল্পে অংশীদারিত্ব করে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেন।
৩. রোমান আব্রামোভিচ (সিবনেফট):
সিবনেফট তেল কোম্পানি নামমাত্র মূল্যে কিনে নেওয়ার পর আব্রামোভিচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি পান, এমনকি চেলসি ফুটবল ক্লাবের মালিকও হন।
৪. ভ্লাদিমির গুসিনস্কি (মিডিয়া-মোস্ট):
গুসিনস্কি তার মিডিয়া সাম্রাজ্যের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করেন এবং ইউরোপীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে সম্পদ অর্জন করেন।
৫. ভ্লাদিমির পোটানিন (ইন্টাররোস):
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ তহবিলের সঙ্গে কাজ করে পোটানিন রাশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল অংশ দখল করেন।
৬. মিখাইল ফ্রিডম্যান (আলফা গ্রুপ):
বিপি-এর সঙ্গে চুক্তি করে ফ্রিডম্যান রাশিয়ার তেল উৎপাদনকে পশ্চিমা বাজারে সংযুক্ত করেন।
৭. আনাতোলি চুবাইস:
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ-এর সমর্থন নিয়ে চুবাইস বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া চালিয়ে যান, যা সাধারণ জনগণের পরিবর্তে কেবল অভিজাতদের লাভবান করেছে।
পরিণাম:
এই সম্পদ লুটের ফলে রাশিয়ার সাধারণ মানুষ দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অসমতার শিকার হন। আজও এই ইতিহাস রাশিয়ার অর্থনীতি ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে চলেছে।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, যদি কোনো দেশ তার সম্পদের উপর নজর না রাখে, তবে বিদেশি প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি কীভাবে সেই দেশের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করতে পারে।