ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামার ডাক দিয়েছিল এসএফআই। বহুদিন ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়া, বেকারদের প্রতি সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছ নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতেই এই আন্দোলন। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবায় দুর্নীতির প্রতিবাদ জানাতে এসএফআই মিছিল করে বিকাশ ভবনের দিকে এগিয়ে যায়।
আন্দোলনের মূল দাবি:
এসএফআই নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিকল্প শিক্ষানীতির প্রস্তাব তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের এই প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। পুলিশের ব্যারিকেড, লাঠিচার্জ এবং প্রিজন ভ্যানে ধরপাকড়ের মাধ্যমে আন্দোলন স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়।
পুলিশের ভূমিকা ও ক্ষোভ:
এসএফআই নেত্রী বর্ণনা মুখার্জি অভিযোগ করেছেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর পুরুষ পুলিশ কর্তৃক নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “চোর-ডাকাতদের ধরতে না পারা পুলিশ ছাত্রদের ওপর লাঠি চালাচ্ছে। রাজ্যে এত দুর্নীতি ও অপরাধের মধ্যেও ছাত্র আন্দোলনই তাদের চোখে পড়ে।”
গ্রেপ্তার, অবরোধ ও মুক্তি:
বিকাশ ভবন থেকে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনকারীদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় প্রিজন ভ্যানে। প্রিজন ভ্যান আটকে রেখে প্রতিবাদ জানায় এসএফআই কর্মীরা। প্রিজন ভ্যানে ছাত্ররা অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
বিকেলের দিকে করুণাময়ী মোড় অবরোধ করেন এসএফআই কর্মীরা। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলা এই অবরোধে জনজীবন অচল হয়ে পড়ে। অবশেষে পুলিশ প্রশাসন আন্দোলনরত আটক ছাত্র-ছাত্রীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
এসএফআই-এর বক্তব্য:
রাজ্য সভাপতি প্রণয় কার্য্যী এবং অন্যান্য নেতারা বলেছেন, “আমরা কোনও বিশৃঙ্খলা করতে আসিনি। বিকল্প শিক্ষানীতি নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলাম। কিন্তু এই গণতন্ত্রবিরোধী সরকার আমাদের দমন করতে পুলিশ পাঠিয়েছে।”
বিক্ষোভ:
বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত করুণাময়ী মোড়ে এসএফআই কর্মীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যান। তাঁরা রাজ্যের পুলিশ এবং প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন এবং নিজেদের দাবি পূরণের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।
দীর্ঘক্ষণ অবরোধ এবং উত্তাল পরিস্থিতির পর অবশেষে আটক ছাত্র-ছাত্রীদের মুক্তি মেলার ঘটনা রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের এই ঘটনা শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দমনপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের নজির হয়ে থাকল।