বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে পরিচিত সিআইএ, তার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছায়ার মধ্যে কাজ করে আসছে। যদিও তাদের প্রকাশ্য মিশন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করা, তবে এর গোপন ইতিহাস এক ভিন্ন বাস্তবতা তুলে ধরে: মাদক ব্যবসা এবং অর্থপাচার, যা তাদের "ব্ল্যাক বাজেট" এবং গোপন কার্যক্রমকে অর্থায়ন করত।
অপারেশন এক্স: একটি গোপন অর্থের উৎস
ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়, সিআইএ এমন তহবিলের সন্ধান করছিল যা ট্রেস করা সম্ভব নয়, যা তাদের বৈশ্বিক কমিউনিস্ট-বিরোধী অভিযানগুলিকে অর্থায়ন করতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে, মাদক ব্যবসা হয়ে উঠল তাদের অন্যতম প্রধান গোপন অর্থের উৎস।
- সাউথইস্ট এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল: ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, সিআইএ লাওসের আফিম বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত উপজাতিদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে, যা বৈশ্বিক হেরোইন বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করেছিল।
- দক্ষিণ আমেরিকা: তারা কোকেন রুটগুলিকে রক্ষা করেছিল এবং কার্টেলগুলির উত্থানকে মদদ দিয়েছিল।
- দ্য ফ্রেঞ্চ কানেকশন: তুরস্ক থেকে আমেরিকায় হেরোইন পাচারের নেটওয়ার্কে গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ রয়েছে।
জনসাধারণ যেখানে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দেখেছিল, সিআইএ মাদককে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে একটি আত্মনির্ভর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এটি এমন এক গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল যা অস্বীকারযোগ্য এবং ছুঁতে অক্ষম।
সত্য উদঘাটন এবং এর পরিণতি
সব রহস্য চিরকাল লুকিয়ে রাখা যায় না। যারা সিআইএ-এর এই অন্ধকার সাম্রাজ্য উদঘাটন করতে চেয়েছিল, তারা ভয়ঙ্কর পরিণতির শিকার হয়েছিল।
- কিকি কামারেনা: মেক্সিকোতে নিযুক্ত ডিইএ এজেন্ট, যিনি সিআইএ এবং গুয়াদালাহারা কার্টেলের সংযোগ উদঘাটন করেছিলেন। তার ফলশ্রুতিতে, তাকে অপহরণ করে ৩০ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয় এবং নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার মৃত্যু ছিল একটি রক্তাক্ত বার্তা।
- ব্যারি সিল: একজন পাইলট, যিনি একদিকে পাবলো এসকোবার এবং অন্যদিকে সিআইএ-এর জন্য কাজ করতেন। তিনি উভয় পক্ষের কার্যক্রম জানতেন। তার জন্য পুরস্কার ছিল প্রকাশ্যে হত্যা, যা কার্টেলের আক্রমণ হিসেবে সাজানো হয়েছিল।
- সান্তে বারিও: ডিইএ-এর একজন তদন্তকারী, যিনি সিআইএ-এর মাদক সাম্রাজ্যের প্রমাণ খুঁজে পেয়েছিলেন। তার রহস্যজনক মৃত্যু—"পিনাট বাটার স্যান্ডউইচ খেয়ে শ্বাসরোধ"—একটি পরিষ্কার বার্তা ছিল: থামো, নাহলে তুমি পরবর্তী।
গোপন চুক্তির প্রভাব
সিআইএ এবং মাদক কার্টেলের এই জোট বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল:
- রাষ্ট্রগুলির অস্থিতিশীলতা: সরকার পতন, বিদ্রোহকে মদদ, এবং সমাজের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া।
- দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা: রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং মাদক ব্যবসায়ের অর্থে জড়িয়ে পড়া।
- ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায়: মাদকাসক্তি এবং সহিংসতার শিকার অসংখ্য পরিবার এবং সম্প্রদায়।
জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি
সিআইএ-এর এই অন্ধকার ইতিহাস দেখায় যে, একটি সংস্থা যাকে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই আইন লঙ্ঘন করে গোপনে কার্যক্রম চালিয়েছে। এই সত্যগুলো প্রকাশ করা শুধু ন্যায়বিচারের প্রশ্ন নয়, বরং ক্ষমতাকে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান।
অপারেশন এক্স-এর উত্তরাধিকার আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যত গভীরেই রহস্য চাপা থাকুক না কেন, একদিন তা প্রকাশিত হবেই। আর যারা এই অন্ধকারের ভেতরে প্রবেশ করার সাহস করে, তাদের প্রায়ই মূল্য দিতে হয় নিজের রক্ত দিয়ে।
