প্রয়াগরাজ : মহাকুম্ভের পবিত্রতম দিন অমৃত স্নানের জন্য গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর সংগমে জড়ো হয়েছিলেন কোটিরও বেশি ভক্ত। কিন্তু ভিড়ের চাপে তৈরি হওয়া অরাজক পরিস্থিতিতে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারালেন অনেকে। ঘটনাস্থলেই আহত হয়েছেন ৩০ থেকে ৪০ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজন ক্রিটিক্যাল অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। ভক্তদের পরিবারগুলোর অভিযোগ, বিশাল ভিড় সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ধসে পড়েছিল।
কী ঘটেছিল?
বুধবার সকালে মোক্ষদায়ী অমাবস্যায় অমৃত স্নানের জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সংগমের মূল ঘাটে প্রবেশের সময় হঠাৎ ভিড়ের ধাক্কায় একদল ভক্ত নিচে পড়ে যান। এরপরই শুরু হয় পদদলিতের দৃশ্য। ভক্তরা জানান, "আমরা নাহার জন্য যাচ্ছিলাম, হঠাৎ পিছন থেকে জোর ধাক্কা। কেউ দাঁড়াতে পারছিল না। অনেকেই নিচে পড়ে গেলেন, আমাদের ওপর দিয়ে মানুষ চলতে থাকল।" আহতদের মধ্যে ছতরপুরের এক ভক্তের চাচা নিহত হয়েছেন। তাঁর ভাগ্নে বলেন, "চাচাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেখানে মৃত ঘোষণা করা হয়। এখনও আমরা তাঁর দেহ খুঁজে পাচ্ছি না।"
হাসপাতালে চরম বিশৃঙ্খলা:
কুম্ভ মেলার সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বেশিরভাগ আহতকে। অনেকেই ভেন্টিলেটরে রয়েছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও মৃত ও আহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি প্রশাসন। এক চিকিৎসক বলেন, "এমন পরিস্থিতিতে গোনা কঠিন। অনেককে পরিবার নিজেরা বাড়ি নিয়ে গেছেন।"
ভক্তদের অভিযোগ:
মধ্যপ্রদেশের বাগেশ্বর ধামের কাছে থাকা এক ভক্তের মা নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি বলেন, "ঘটনার সময় পুলিশ বা সাহায্যকারী কেউই ছিল না। মানুষ নিজেদের মতো করে লড়াই করছিল।" অন্য এক ভক্তা জানান, "আমার ভাইকে এম্বুলেন্সে তুলতে চাইলে চালক বললেন, 'গাড়ি ভর্তি'। শেষে পুলিশ থানায় নিয়ে যেতে হয়েছিল।"
প্রশাসনের ব্যাখ্যা:
প্রশাসনিক কর্তারা দাবি করেছেন, "১০ কোটিরও বেশি ভক্তের ভিড় সামাল দিতে একমুখী ট্র্যাফিক, সেক্টর ভিত্তিক নাহার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ আচমকা ভিড়ের চাপে কিছু গেট ভেঙে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়।" পুলিশ সুপার বলেন, "দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা হয়েছে।"
মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাকুম্ভে সংগমে স্নান করলে মোক্ষলাভ হয়। বিশেষ করে অমাবস্যা তিথিতে এই স্নানের গুরুত্ব সর্বাধিক। কিন্তু এবারের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ও ভিড় ব্যবস্থাপনাকে ঘিরে। ভক্তরা বলছেন, "পবিত্র স্নানের জন্য এসেছিলাম, কিন্তু মৃত্যুভয়ে কেঁপে উঠলাম।"
প্রশাসন এখনও নিখোঁজদের সন্ধান ও আহতদের চিকিৎসায় ব্যস্ত। তবে এই ঘটনায় ফের স্পষ্ট হয়েছে, বিশাল জনসমাগমে পরিকল্পনার ঘাটতি থাকলে প্রাণহানির ঝুঁকি থেকেই যায়। মহাকুম্ভের পবিত্রতায় যেন আর কখনও এমন মর্মান্তিক অধ্যায় না জোড়া হয়, সে দাবি সাধারণ মানুষের।