শিয়ালদা আদালতে আরজিকর মেডিকেল কলেজের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিচারক অনির্বান দাস সোমবার তার সাজা ঘোষণা করবেন। তবে, এই রায় ঘোষণার পরও নিহত চিকিৎসকের পরিবার তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তাদের দাবি, সিবিআইয়ের তদন্তে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, যা প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে পারে।
পরিবারের অভিযোগ
নিহতের বাবা-মা আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সামনে বলেন, "আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি কিনা, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে। আমাদের মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সঞ্জয় রায় একজন অভিযুক্ত হতে পারে, কিন্তু আমরা মনে করি এর পেছনে আরও বড় চক্র কাজ করেছে।"
তারা আরও বলেন, "হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ হয়নি। ঘটনার সময় হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মীদের ভূমিকা এবং অপরাধস্থলের আশপাশের অন্যান্য প্রমাণ সঠিকভাবে তদন্তে আনা হয়নি। আমরা চাই, এই মামলার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখা হোক।"
তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন
পরিবারের আইনজীবী জানান, সিবিআই তদন্তে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, "মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার তাগিদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করা হয়েছে। শুধুমাত্র সঞ্জয় রায়কে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কিন্তু অন্য কোনো ব্যক্তি বা সহযোগীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়নি। এমনকি হাসপাতালের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও সীমিত ছিল।"
সিসিটিভি ফুটেজ এবং সাক্ষীদের ভূমিকা
নিহতের পরিবার দাবি করেছে যে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ অসম্পূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, "ফুটেজে স্পষ্টভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে দেখা গিয়েছিল। তারা কে বা তাদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি।"
বিচারকের মন্তব্য
বিচারক অনির্বান দাস রায় ঘোষণার সময় বলেন, "সিবিআইয়ের জমা দেওয়া তথ্য এবং প্রমাণের ভিত্তিতে সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত প্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করে। নতুন কোনো তথ্য বা প্রমাণ থাকলে উচ্চতর আদালত সেই বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।"
পরবর্তী পদক্ষেপ
নিহতের পরিবার সুপ্রিম কোর্টে নতুন তদন্তের দাবি জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মতে, "মামলার প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য উচ্চতর তদন্তের প্রয়োজন। আমরা চাই, অপরাধের পেছনের প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়ুক।"
জনমত এবং বিতর্ক
এই ঘটনার পর সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে তদন্তের গভীরতা কমিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদিকে, সিবিআই তাদের তদন্তের নিরপেক্ষতা এবং কার্যকারিতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
আগামী সোমবারের দিকে নজর
আগামী সোমবার সঞ্জয় রায়ের শাস্তি ঘোষণা হবে। সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদণ্ড, আর সর্বনিম্ন যাবজ্জীবন। তবে পরিবারের দাবি এবং তদন্ত নিয়ে ওঠা প্রশ্ন নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত এবং তদন্তের উপর।
এই ঘটনা নিয়ে শহরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ন্যায়বিচারের জন্য নিহত চিকিৎসকের পরিবারের লড়াই এবং তাদের প্রশ্ন আদালত ও তদন্তের উপর নতুন চাপ তৈরি করেছে।