ভারতের চাকরির সংকট ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সম্প্রতি, আনম্যানড ডায়নামিক্স নামে একটি প্রযুক্তি সংস্থায় মাত্র ২টি ইন্টার্নশিপ পদের জন্য ১,২০০ জন আবেদন করেছেন। এই ঘটনা দেশের ক্রমবর্ধমান শ্রমশক্তি এবং সীমিত কর্মসংস্থানের মধ্যে গভীর অসামঞ্জস্যতার চিত্র তুলে ধরেছে। সংস্থার সিইও এবং প্রধান বিজ্ঞানী শ্রীনাথ মল্লিকার্জুনন এই পরিস্থিতিকে ‘জনসংখ্যাগত বিপর্যয়’ হিসেবে অভিহিত করে সতর্ক করেছেন।
ভারতের তরুণ জনসংখ্যাকে প্রায়ই ‘জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ’ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ-তরুণী যখন চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন, তখন তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে দেশ ব্যর্থ হচ্ছে। আনম্যানড ডায়নামিক্সের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের মতো প্রাথমিক স্তরের পদের জন্য এত বিপুল আবেদন জমা পড়া চাকরির সুযোগের অভাব এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিল্পের চাহিদার অমিলের প্রমাণ।
মল্লিকার্জুনন এই সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, “আমরা একটি সময়বোমার উপর বসে আছি। যদি আমরা আমাদের তরুণদের সঠিক দক্ষতা দিয়ে প্রস্তুত না করি এবং তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি না করি, তাহলে এই জনসংখ্যাগত সুবিধা বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে।” তিনি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন। তাঁর মতে, বেকারত্ব, সামাজিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
ভারতে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের কারণ। সরকারি তথ্য এবং স্বাধীন গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি বছর লাখ লাখ স্নাতক তৈরি হলেও তাদের অনেকেরই ব্যবহারিক দক্ষতা বা শিল্পে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে না। ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তারা পিছিয়ে পড়ছেন। আনম্যানড ডায়নামিক্সের মতো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংস্থায় এই পরিস্থিতি চাকরিপ্রার্থীদের মরিয়া ভাব এবং সুযোগের অভাবকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
শ্রীনাথ মল্লিকার্জুনন শুধু সমস্যা চিহ্নিত করেই থেমে থাকেননি, তিনি ছাত্রদের জন্য ব্যবহারিক পরামর্শও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বিশ্ব তোমার জন্য অপেক্ষা করবে না। নিজের পথ নিজেকেই তৈরি করতে হবে।” তিনি তরুণদের তিনটি পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, তিনি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক বই থেকে পড়াশোনার উপর জোর দিয়েছেন, যা আধুনিক জ্ঞান এবং বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। দ্বিতীয়ত, তিনি এনপিটিইএল (NPTEL) কোর্সের কথা বলেছেন, যা আইআইটি ও আইআইএসসি-র মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ দেয়। “এগুলো সোনার খনি,” তিনি মন্তব্য করেন। তৃতীয়ত, তিনি স্বাধীন প্রকল্পের মাধ্যমে হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। “নিয়োগকর্তারা শুধু ডিগ্রি চান না, তারা এমন সমস্যা সমাধানকারী চান যারা বাস্তবে কাজ দেখাতে পারে।”
এই পরামর্শ শিল্প নেতাদের ভারতের প্রতিভা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য প্রযুক্তির কারণে চাকরির ধরন বদলে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান যথেষ্ট নয়। আনম্যানড ডায়নামিক্সের মতো সংস্থাগুলো এমন প্রার্থী চায় যারা শুরু থেকেই কাজে লাগতে পারে—যা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রায়ই দিতে ব্যর্থ হয়।
ভারতের জনসংখ্যাগত সুবিধা কি সত্যিই বিপর্যয়ে পরিণত হবে? মল্লিকার্জুননের সতর্কবাণী এবং ১,২০০ আবেদনকারীর গল্প এই প্রশ্নকে আরও জরুরি করে তুলেছে। প্রতিটি আবেদনের পিছনে রয়েছে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, হতাশা এবং অনিশ্চয়তার গল্প। এই সংকট মোকাবিলায় দেশ কি সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।