মণিপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: মণিপুরে চলমান সাংবিধানিক সংকট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যটিতে গত দুই বছর ধরে মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও হিংসার ঘটনা অব্যাহত থাকায় রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মু শাসন জারির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
গত কয়েক মাসে মণিপুরে সংঘর্ষের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বহু মানুষের প্রাণহানি ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের ব্যর্থতায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠে এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করে। মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিং গত ৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের পরই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এবং মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবি নিয়ে জটিলতার কারণে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মাধ্যমে এই সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিরোধী দলগুলি এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করেছে।
মণিপুরে গত দুই বছর ধরে মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এই সংঘর্ষে রাজ্যজুড়ে হিংসা ও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর এখন কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কিছু মহল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও অন্যরা এটিকে রাজনৈতিক সংকটের একটি অস্থায়ী সমাধান বলে মনে করছেন। এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে এবং রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে কিনা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপকে জাতীয় স্তরে সমর্থন ও সমালোচনা দুইই দেখা যাচ্ছে। বিরোধী দলগুলি দাবি করেছে যে রাজ্য সরকারকে আরও সময় দেওয়া উচিত ছিল এবং রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার প্রয়োজন ছিল না। অন্যদিকে, শাসক দল বিজেপি দাবি করেছে যে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।
মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর এখন সকলের নজর কেন্দ্রীয় সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। রাজ্যের শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তা এখন দেখার বিষয়।