ডানকুনি , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫– সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্মেলন চলাকালীন এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের সম্পাদক মোঃ সেলিম হুগলি জেলার একটি মর্মান্তিক ঘটনা, নারী নিরাপত্তা, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।
সেলিম প্রথমে হুগলি জেলার চন্দননগরের নারুয়া গ্রামের এক প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী সুতরাং চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের সম্মেলন চলার মধ্যেই এই দুর্ভাগ্যজনক খবর পেলাম। এটা শুধু তার প্রতিভা ও সম্ভাবনার জন্যই নয়, তার মৃত্যুর ভয়াবহতার জন্যও হৃদয়বিদারক।” তিনি জানান, নয় মাস আগে তার বাবা ক্যান্সারে মারা গেছেন, এবং পরিবারে তার ঠাকুরমা ছাড়া আর কেউ নেই। “আমরা পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই,” তিনি বলেন। ঘটনার খবর পাওয়ার পর স্থানীয় এলাকার সম্পাদক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পুলিশের কাছে যান।
তবে, তিনি পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। “পুলিশ একজনকে শুধু দেখানোর জন্য ধরে রেখেছে। আজকের দিনে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন থেকে মালিকের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। এখানে দুষ্কৃতীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশ রয়েছে,” তিনি অভিযোগ করেন। গাড়িটি বুদবুদের কাছে একটি পেট্রোল পাম্প থেকে গোয়ার দিকে যাচ্ছিল বলে জানা গেছে, কিন্তু অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কোনো অগ্রগতি হয়নি। “গাড়ি পাওয়া গেলে তাদের পরিচয় কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এরা কি শাসকদলের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাশালী?” তিনি প্রশ্ন তোলেন।
এই ঘটনাকে রাজ্যে নারী নিরাপত্তার বৃহত্তর সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করে তিনি বলেন, “পূর্ব বর্ধমানের আরজি কাণ্ডের মতো ঘটনায় তিনজন মহিলা, যার মধ্যে একজন আদিবাসী মেয়ে, ধর্ষিত হয়েছে। এই সাহস দেখায় দুষ্কৃতীদের বুকের পাটা বেড়ে গেছে, আর পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে।” তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) উপর অপরাধীদের রক্ষা করার অভিযোগ তুলে বলেন, “এটা রাজ্যে নারী নির্যাতন ও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছে।”
সম্মেলনের অগ্রগতি নিয়ে তিনি বলেন, “তৃতীয় দিনে প্রতিনিধিরা আমাদের প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা শেষ করেছেন। গঠনমূলক পরামর্শ এসেছে, যা আজকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মনোবল বাড়িয়েছে।” তিনি দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রথম দিনে পেশ করা খসড়া প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি সংশোধনী এসেছে, যা সম্পাদক মণ্ডলী চূড়ান্ত করে প্রতিনিধিদের ভোটে দেবে। “এই প্রক্রিয়ায় আমাদের প্রতিবেদন সমৃদ্ধ হবে,” তিনি জানান।
তিনি প্রথমবারের মতো একটি বিশেষ অধিবেশনের কথাও ঘোষণা করেন, যেখানে ২০২৬-২০২৮ সালের জন্য পরিকল্পনা তৈরি হবে। “মিশন মোডে কাজ করব, ব্রাঞ্চ থেকে রাজ্য পর্যায়ে সমন্বয় করে মাঠে-কারখানায় লড়াই চালাব,” তিনি বলেন। সম্মেলন ২৫ ফেব্রুয়ারি স্পোর্টিং ইউনিয়ন মাঠে জনসভার মাধ্যমে শেষ হবে, যেখানে প্রকাশ করাত, হিমা মুখার্জি, অভয় ঘোষ ও সেলিম বক্তৃতা দেবেন।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গে তিনি টিএমসি ও বিজেপির বিরুদ্ধে ২০২৬ নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অভিযোগ তোলেন। “রামনবমী হিংসা হোক বা বেলডাঙ্গায় দাঙ্গা, টিএমসি ও বিজেপি এর সুবিধাভোগী। আমরা দাঙ্গা রুখতে লাল ঝান্ডার নেতৃত্বে রাস্তায় থাকব,” তিনি বলেন। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি স্যালাইন কেলেঙ্কারি ও জুনিয়র ডাক্তারদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। “টিএমসির ভয় দেখানো ও প্রতিশ্রুতির নীতি কাজ করবে না। আমরা ডাক্তারদের পাশে আছি,” তিনি জানান।
শেষে তিনি মিডিয়াকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবস্থা তদন্তের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। “হুগলি বা অন্যত্র যেকোনো প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার, নার্স, বেডের উপলব্ধতা দেখুন। টিএমসির উন্নতির দাবি মিথ্যা,” তিনি বলেন।
সম্মেলনে বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি সংকট নিয়ে আলোচনা চলছে, যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনসভায় ঘোষণা করা হবে। টিএমসি-বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে লড়াই ও সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেলিমের বক্তৃতা শেষ হয়।