শংকর পাল | ভিউজ নাউ
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে মিশিগানের ফ্লিন্টে জেনারেল মোটরস (জিএম) কোম্পানির ৪৮,০০০ শ্রমিক তাদের ৪৪ দিনের ঐতিহাসিক সিট-ডাউন ধর্মঘটের বিজয় অর্জন করে। এই আন্দোলন শুধু মার্কিন গাড়ি শিল্পেই নয়, শ্রমিক অধিকারের লড়াইয়ে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
ধর্মঘটের সূচনা
১৯৩৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, জিএমের ফিশার বডি প্ল্যান্ট নং ১-এ এই ধর্মঘটের সূচনা হয়। শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীন কাজের পরিবেশ, কম মজুরি এবং কাজের অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স (ইউএডব্লিউ) ইউনিয়নের নেতৃত্বে তারা কারখানার ভেতরে বসে কাজ বন্ধ করে দেয়। এই "সিট-ডাউন" কৌশল দ্রুত অন্যান্য প্ল্যান্টেও ছড়িয়ে পড়ে, যা জিএমের উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে অচল করে দেয়।
চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি
শ্রমিকরা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কারখানায় দিন-রাত কাটায়, যেখানে খাবার, পানি ও চিকিৎসার অভাব ছিল। বাইরের দুনিয়া থেকে পরিবার ও কমিউনিটির সমর্থন তাদের মনোবল ধরে রাখতে সহায়তা করে। এদিকে, পুলিশ ও কোম্পানি-নিযুক্ত নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা চালায়। তবে মিশিগানের গভর্নর ফ্রাঙ্ক মারফি শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ন্যাশনাল গার্ড ব্যবহার করে ধর্মঘট ভাঙতে অস্বীকৃতি জানান।
ইতিহাস গড়ার দিন
৪৪ দিনের কঠিন লড়াইয়ের পর, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে জিএম শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে ইউএডব্লিউকে শ্রমিকদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী ইউনিয়ন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই চুক্তি শ্রমিকদের জন্য বর্ধিত মজুরি, উন্নত কাজের পরিবেশ এবং কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
প্রভাব ও উত্তরাধিকার
ফ্লিন্ট সিট-ডাউন ধর্মঘট শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটি শ্রমিকদের ঐক্যের শক্তি ও তাদের অধিকার রক্ষার ক্ষমতা প্রমাণ করে। এই ধর্মঘট গাড়ি শিল্পের ইউনিয়নাইজেশনের সূচনা করে এবং অন্যান্য শিল্পে অনুরূপ আন্দোলনের প্রেরণা দেয়।
আজ, ফ্লিন্ট ধর্মঘটকে শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের একটি প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি প্রমাণ করে যে শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং সফল হতে পারে।