ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতিতে সৌদি আরব সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের বিতর্কিত প্রস্তাব প্রকাশ্যে প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়াও, ইসরায়েলের 'চরম বক্তব্য' সম্পর্কে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ন্যায়সংগত ও স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে রিয়াদ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প গাজাবাসীদের স্থানান্তরের একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন এবং মিশরের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সহজতর করার ৯৯% সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, সৌদি আরবের সরাসরি এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা অনেক দেশ ও সংস্থার তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
ট্রাম্পের বক্তব্য ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। তিনি দাবি করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র গাজার দায়িত্ব নেবে এবং এটিকে 'সঠিকভাবে পরিচালনা করবে'। এছাড়াও, তিনি বলেছেন যে গাজা থেকে ২০ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তর করা 'কঠিন নয়'। এই মন্তব্যগুলো ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দ এবং আঞ্চলিক মিত্রদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে, যারা এটিকে মানবিক ও রাজনৈতিক জটিলতাকে অবমূল্যায়নের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের জবাবে জর্ডানের রাজা আবদুল্লাহ দ্বিতীয় জোর দিয়ে বলেছেন যে কোনো সমাধান অবশ্যই সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করে বাস্তবায়িত হতে হবে। জর্ডান গাজা থেকে ২,০০০ অসুস্থ শিশুকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণের প্রস্তাব দিলেও, রাজা স্পষ্ট করেছেন যে যেকোনো ব্যাপক সমাধান সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং মিশরসহ আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করতে হবে।
ট্রাম্প আরও দাবি করেছেন যে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য দেশ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের গ্রহণ করতে পারে। তবে, এই দাবি সংশয় ও প্রত্যাখ্যানের মুখে পড়েছে। তৃতীয় দেশে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের ধারণাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে অবজ্ঞা করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব যেকোনো স্থানান্তর পরিকল্পনা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দুই রাষ্ট্রের সমাধানের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে গাজা ও অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের জন্য যেন তাকে জবাবদিহি করা হয়।
উত্তেজনা বাড়ার সাথে সাথে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরব ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ঐতিহ্যবাহী মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজনকে তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংকট সমাধানে বিভক্ত, অনেকেই শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সংগত সমাধানের জন্য নতুন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার আহ্বান জানাচ্ছেন।
গাজার পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ, মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলমান। সৌদি আরব ও জর্ডানের মতো প্রধান আঞ্চলিক শক্তিগুলোর ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কোনো সমাধান ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, বাধ্যতামূলক স্থানান্তর বা বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণ নয়।
বিশ্ব যখন এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তির জন্য এগিয়ে আসবে, নাকি সংঘাত ও দুর্ভোগের চক্র চলতেই থাকবে?