ওয়াশিংটন, ডি.সি. — সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের নেতৃত্বে ফেডারেল কর্মীবাহিনী কমানোর প্রচেষ্টায় হাজারো কর্মী চাকরিচ্যুত হওয়ায় পুরো দেশে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ব্যাপক ছাঁটাইয়ের ফলে কর্মীরা বেতন হারানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। এরই মধ্যে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের কাছে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীরা কংগ্রেসের কাছে জবাবদিহিতা দাবি করছেন এবং ভবিষ্যতে আরও ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
এই ছাঁটাইয়ের প্রভাব পড়েছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোতে। ইতিমধ্যে কর্মী সংকটের মধ্যে থাকা এফএএ-তে আরও কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, যা জননিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনাগুলো এই সংকটকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
ক্যাপিটল ভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ফেডারেল কর্মীরা। "কাজ করুন!" এবং "কংগ্রেস কোথায়?"— এমন স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে রাজধানীর রাস্তা। বিক্ষোভকারীরা আইনপ্রণেতাদের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন এবং এই ছাঁটাইয়ের পেছনে যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলছেন।
একজন বিক্ষোভকারী, যিনি এফএএ-তে কাজ করতেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এটা শুধু চাকরি হারানোর বিষয় নয়, এটা আমাদের স্থিতিশীলতা, মর্যাদা এবং পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষমতা হারানোর বিষয়। আমরা এখানে এসেছি যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের জবাবদিহিতা দাবি করতে।"
এই বিক্ষোভের পাশাপাশি ইলন মাস্কের কোম্পানি ডোজের একটি আবেদন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কোম্পানিটি আইআরএস (ইন্টারনাল রেভেনিউ সার্ভিস) থেকে সংবেদনশীল করদাতা তথ্য চেয়েছে, যার উদ্দেশ্য হিসেবে কর ফ্রড মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে। তবে এই আবেদন আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ করে গোপনীয়তা এবং ডেটা সুরক্ষা নিয়ে।
গোপনীয়তা অধিকার কর্মী জেন ডো বলেন, "এটি একটি স্পষ্ট অতিরিক্ত চাহিদা, যা প্রতিটি আমেরিকান করদাতার গোপনীয়তা অধিকারের জন্য হুমকিস্বরূপ। আইআরএস-এর উচিত এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা এবং আমাদের ডেটা সুরক্ষিত রাখা।"
এই ছাঁটাই এবং ডেটা চাওয়ার ঘটনা ট্রাম্প ও মাস্কের ফেডারেল কর্মীবাহিনী কমানোর বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। তবে এই ব্যাপক ছাঁটাইয়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে এফএএ-এর মতো সংস্থাগুলোতে, যেখানে কর্মী সংকট জননিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত কর্মীদের মানসিক অবস্থা খুবই নাজুক। অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা ও হতাশার কথা প্রকাশ করেছেন। একজন বিক্ষোভকারী বলেন, "আমরা প্রতিনিয়ত ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে আছি। এটা শুধু আমাদের ব্যাপার নয়, এটা সরকারি চাকরির ভবিষ্যৎ এবং আমাদের সরকার কীভাবে কার্যকর থাকবে তার প্রশ্ন।"
বিক্ষোভ বাড়ার সাথে সাথে কংগ্রেসের হস্তক্ষেপের দাবি জোরালো হচ্ছে। আইনপ্রণেতাদের ছাঁটাই তদন্ত এবং ফেডারেল সংস্থাগুলোতে পর্যাপ্ত কর্মী নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সিনেটর জন স্মিথ বলেন, "কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সরকার চালিয়ে নেওয়া কর্মীদের রক্ষা করতে হবে। এই ছাঁটাই শুধু ব্যক্তিগত জীবনের জন্য হুমকি নয়, এটি আমাদের দেশের স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।"
পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল, এবং অনেক ফেডারেল কর্মী আরও ছাঁটাইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। সরকারের ভূমিকা এবং কর্পোরেট প্রভাব নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকলেও একথা স্পষ্ট যে এই সিদ্ধান্তগুলোর মানবিক মূল্য উপেক্ষা করা যায় না।
ফেডারেল কর্মীবাহিনীতে এই ব্যাপক ছাঁটাই এবং মাস্কের ডেটা চাওয়ার ঘটনা সরকারি কর্মীবাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জটিল চ্যালেঞ্জগুলোর প্রতিফলন। বিক্ষোভ বাড়ার সাথে সাথে জবাবদিহিতার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। এই সংকট আমাদের শাসনব্যবস্থায় দক্ষতা এবং মানবিকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বকে তুলে ধরেছে। আগামী দিনগুলো ফেডারেল কর্মীবাহিনীর ভবিষ্যৎ এবং কর্পোরেট স্বার্থ কীভাবে সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।