শুধুমাত্র ভারতেই নয়, অস্ট্রেলিয়ার হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বৃদ্ধাসহায়তা কেন্দ্রগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন-ভাতা ও কাজের পরিবেশের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। শ্রমিক ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএ) সরাসরি আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। এই আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে এক জাতীয় সংগ্রামে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষোভ: 'লড়াই শুধু মজুরির জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্য!'
অস্ট্রেলিয়ান নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ফেডারেশন (এএনএমএফ)-এর নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী কর্মীরা জানান, কোভিড মহামারীর পর থেকে কাজের চাপ বেড়েছে, কিন্তু বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। সরকারি হাসপাতালে নার্সদের বেসরকারি খাতের তুলনায় ১৫-২০% কম বেতন, আর বৃদ্ধাসহায়তা কেন্দ্রগুলিতে কাজের চাপের কারণে প্রতি সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টারও বেশি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। "একদিকে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে, অন্যদিকে আমাদের শ্রমের মূল্য দেওয়া হচ্ছে না—একথা আমরা মানব না!" বলছেন মেলবোর্নের এক নার্স ও বিক্ষোভকারী সারা মিচেল।
কমিউনিস্ট পার্টির হস্তক্ষেপ: 'শ্রমিক-কৃষক-ছাত্রদের ঐক্য গড়ো!'
দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউকে সংগঠিত করতে এগিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডেভিড বার্কের বক্তব্য, "স্বাস্থ্যকর্মীদের এই আন্দোলন শুধু বেতনবৃদ্ধির লড়াই নয়, এটা পুঁজিবাদী সরকারের স্বাস্থ্যখাত বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। আমরা শ্রমিক ইউনিয়ন, ছাত্রসংগঠন ও সামাজিক আন্দোলনগুলিকে একত্রিত করে এই সংগ্রামকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেব।" পার্টির নেতৃত্বে ইতিমধ্যে সিডনি, মেলবোর্ন ও ব্রিসবেনে মিছিল-সমাবেশের পাশাপাশি সরকারি দপ্তর অবরোধের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
দাবি-দাওয়া: কী চাইছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা?
১. অবিলম্বে ৩০% বেতনবৃদ্ধি এবং কর্মঘণ্টা সপ্তাহে ৩৮ ঘণ্টায় সীমিতকরণ।
২. সরকারি হাসপাতাল ও বৃদ্ধাসহায়তা কেন্দ্রে স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা এবং চুক্তিভিত্তিক কাজ বাতিল।
৩. নার্স-প্র্যাকটিশনারদের স্বাধীনভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অধিকার ও মেডিকেয়ার রিবেট সম্প্রসারণ।
৪. স্বাস্থ্যখাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বন্ধ এবং সরকারি তহবিল বাড়ানো।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া: আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি
ভারতের দিল্লি, মুম্বাই ও কলকাতায় স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি। পার্টির মুখপাত্র জেসিকা উইলকিনসন বলেন, "ভারতের ASHA কর্মী থেকে অস্ট্রেলিয়ার নার্স—শোষণের চাকা একই। পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের লড়াই আন্তর্জাতিক, আমাদের শত্রু এক—মুনাফালোভী কর্পোরেট ও তাদের রক্ষাকর্তা সরকারগুলি।"
সরকারের ভূমিকা: 'শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষা করা যাবে না'
অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিমধ্যে এএনএমএফ-এর সাথে আলোচনা শুরু করলেও, স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি পূরণে কোনো স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেয়নি। অন্যদিকে, বিরোধী দল লিবারেল-ন্যাশনাল কোয়ালিশন বিক্ষোভকারীদের 'অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক' বলে আখ্যা দিয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির পাল্টা জবাব: "যে সরকার ব্যাংক ও কর্পোরেট করদাতাদের ট্যাক্স ছাড় দিচ্ছে, তারা কীভাবে জনগণের স্বাস্থ্য চালাবে?"
আন্দোলনের Zukunft: 'জিতবেই শ্রমিক শ্রেণী!'
এএনএমএফ ও সিপিএ-র পরবর্তী কৌশল হলো গ্রামীণ অঞ্চলে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা সংকট সবচেয়ে তীব্র। ২৫ অক্টোবর সমগ্র দেশজুড়ে 'স্বাস্থ্যখাত বাঁচাও' হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। পার্টির ডাকে অস্ট্রেলিয়ার ট্রেড ইউনিয়ন কাউন্সিল (ACTU)-ও সমর্থন জানিয়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টির বার্কের ভাষ্য, "এই আন্দোলন শুধু অস্ট্রেলিয়ার নয়, গোটা বিশ্বের শ্রমিকদের সংগ্রামের অংশ। আমরা যতদিন না শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সরকার গড়ছি, ততদিন লড়াই থামবে না।"
*স্বাস্থ্যকর্মীদের এই সংগ্রাম পুঁজির দাসত্ব থেকে মুক্তির লড়াই—জয় হোক মেহনতি মানুষের!*