আন্তর্জাতিক নারী দিবসে উঠে আসছে ভারতের মনিপুরের ১৩ বছরের জলবায়ু কর্মী লিসিপ্রিয়া কাঙ্গুজামের নাম। পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে তিনি আজ এক প্রজন্মের প্রতীক। মাত্র ৮ বছর বয়সে শুরু করা তার আন্দোলন আজ সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা।
শৈশব থেকে সংগ্রামের শুরু
২০১১ সালের ২ অক্টোবর মনিপুরের বাশিখং-এ জন্ম নেওয়া লিসিপ্রিয়া ছোটবেলা থেকেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বুঝতে পেরেছিলেন। ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তার মনোভাব আরও শক্ত হয়। ২০১৮ সালে মঙ্গোলিয়ায় এক জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশগ্রহণ তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি শুরু করেন চাইল্ড মুভমেন্ট, শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে সচেতন করতে।
নীতির জন্য লড়াই
ভারতের স্কুলগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য লিসিপ্রিয়ার দাবি ধীরে ধীরে ফল দিতে শুরু করেছে। তার প্রচেষ্টার ফলেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানোকে বাধ্যতামূলক করা হয়।
এছাড়াও, ভারতের বায়ুদূষণ নিয়ে তার আন্দোলন নতুন দিশা দেখিয়েছে। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে তার একক প্রতিবাদ দেশের যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করে।
বিশ্বমঞ্চে লিসিপ্রিয়া
২০১৯ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত কপ২৫ সম্মেলনে লিসিপ্রিয়ার ভাষণ তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি দেয়। ২০২৩ সালে দুবাইয়ের কপ২৮-এ "ফসিল ফুয়েল বন্ধ করো" স্লোগান নিয়ে তার প্রতিবাদ সারা বিশ্বে আলোচনার সৃষ্টি করে।
পরিবেশ থেকে মানবাধিকার
২০২৩ সালে মনিপুরে জাতিগত সংঘর্ষের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে লিসিপ্রিয়া দেখিয়ে দেন যে পরিবেশ রক্ষা আর সামাজিক ন্যায়বিচার পরস্পরের সাথে যুক্ত।
সম্মান ও ভবিষ্যৎ
লিসিপ্রিয়ার জীবনসংগ্রাম এখন ভারতের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২৫ সালে তিনি ভারতের জাতীয় যুব দিবস পুরস্কার অর্জন করেন।
লিসিপ্রিয়ার নিজের কথায়, "আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমি থামবো না।" আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার লড়াই সারা বিশ্বের নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।