মহারাষ্ট্রের খাদ্য ও নাগরিক সরবরাহ মন্ত্রী ধনঞ্জয় মুন্ডে তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগপত্র মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস গ্রহণ করেন এবং গভর্নর রাধাকৃষ্ণনও তা অনুমোদন করেছেন। পদত্যাগের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিড জেলার সরপঞ্চ সন্তোষ দেশমুখ হত্যাকাণ্ডে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ওয়ালমিক কারাদের নাম জড়ানো।
হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর বিড জেলার মাসসাজোগ গ্রামের সরপঞ্চ সন্তোষ দেশমুখকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাকে ডোঙ্গাওন টোল প্লাজা থেকে অপহরণ করে একটি এসইউভিতে তুলে নেওয়া হয়। হত্যাকারীরা দেশমুখকে লোহার রড, গ্যাস পাইপ, কাঠের লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে অত্যাচার চালায়। তাকে অপমানজনক স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয় এবং তার ওপর প্রস্রাব করার মতো ঘৃণ্য কাজ করা হয়।
দেশমুখের দেহে ৫৬টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে ওয়ালমিক কারাদের নাম ওঠে, যিনি মন্ত্রী ধনঞ্জয় মুন্ডের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
বিরোধীদের চাপ ও দাবি
বিরোধী দলগুলো প্রথম থেকেই ধনঞ্জয় মুন্ডের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিল। তারা অভিযোগ তোলে যে হত্যাকাণ্ডের পেছনে মুন্ডের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। বিজেপি বিধায়ক নমিতা মুন্দাদা এবং শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র নেতা আদিত্য ঠাকরে দাবি করেন যে মুন্ডেকে শুধু পদত্যাগ নয়, বরং হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আদিত্য ঠাকরে আরও বলেন, "ধনঞ্জয় মুন্ডের পদত্যাগ যথেষ্ট নয়। ফড়নবিস সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ। অবিলম্বে সরকার বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা উচিত।"
মুন্ডের প্রতিক্রিয়া
ধনঞ্জয় মুন্ডে পদত্যাগের সময় নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি বেলের পলসি নামে স্নায়ুরোগে ভুগছেন এবং চিকিৎসার জন্য পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কর্মকাণ্ডে নিজেকে দায়মুক্ত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, "আমি এই ঘটনা নিয়ে অত্যন্ত মর্মাহত। আমার বিবেক আমাকে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।"
সরকারের অবস্থান
মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস ধনঞ্জয় মুন্ডের পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, "এই পদক্ষেপ সরকারের স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করে। আমরা নতুন সরকারকে সংকটমুক্ত রাখতে চাই।"
বিরোধীদের নতুন দাবি
১. ধনঞ্জয় মুন্ডেকে হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা।
২. তদন্তে বিলম্বের জন্য সরকারের বিরুদ্ধে বিধানসভায় ব্রিচ অফ প্রিভিলেজ নোটিশ।
৩. মহারাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি।
ধনঞ্জয় মুন্ডের পদত্যাগ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিরোধীদের চাপ এবং হত্যাকাণ্ডে সহযোগীর নাম জড়ানোর ফলে মুন্ডের পদত্যাগকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।