" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলার ১৪তম সম্মেলন: জেলা সম্পাদক কল্লোল ঘোষের বক্তব্য //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলার ১৪তম সম্মেলন: জেলা সম্পাদক কল্লোল ঘোষের বক্তব্য



পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির ১৪তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো এক ঐতিহাসিক আবহে। জেলার বিভিন্ন অংশ থেকে বিজ্ঞান আন্দোলনের কর্মী ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন এই সম্মেলনে। সম্মেলনের মূল আকর্ষণ ছিল জেলা সম্পাদক কল্লোল ঘোষের বক্তব্য, যেখানে তিনি বিজ্ঞান আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা, সাফল্য, সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন।



কল্লোল ঘোষ তার বক্তব্য শুরু করেন সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে। তিনি বলেন, “প্রতি বছর আমাদের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে, তবে আমরা এখনো জেলা জুড়ে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হইনি। আমাদের লক্ষ্য বৃহত্তর—জেলার প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতিটি মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা শুধুমাত্র বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ নই; জেলার অসংখ্য হিন্দি ও উর্দুভাষী মানুষের কাছেও পৌঁছানো আমাদের অগ্রাধিকার।”

বিজ্ঞান আন্দোলনের সম্প্রসারণ ও নতুন কেন্দ্র স্থাপন

তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা জেলায় এমন কিছু নতুন কেন্দ্র স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি, যা আগে ছিল না। দুর্গাপুরের কাদম্বিনী গাঙ্গুলী কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা একটি বড় অগ্রগতি। দুর্গাপুরের যেসব অঞ্চলে আগে আমরা পৌঁছাতে পারিনি, সেসব এলাকায় এখন আমরা সংগঠন পরিচালনা করছি। একইভাবে, জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিজ্ঞান আন্দোলনের বার্তা পৌঁছানোর জন্য কাজ চলছে। স্কুল ও স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে আমরা গত এক বছরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।”



তবে তিনি স্বীকার করেন, কর্মীর অভাবে অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোগ থমকে গেছে। বিশেষ করে চিত্তরঞ্জন এলাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একসময় এই অঞ্চলটি আমাদের জন্য একটি শক্তিশালী কেন্দ্র ছিল। তবে রেল ইঞ্জিন কারখানার আশেপাশের মানুষের স্থানান্তর ও পরিবর্তনের ফলে আমাদের কাজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে, ওই অঞ্চলের প্রতিনিধিরা আবার সংগঠন শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।”

পরিকল্পনা ও সীমাবদ্ধতা

কল্লোল ঘোষ উল্লেখ করেন, “আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিটি অঞ্চলে বিজ্ঞান সভা গঠন করা। যদিও আমরা এখনো সম্পূর্ণ সফল হতে পারিনি, তবে ১১টি কেন্দ্রে ৩২টি বিজ্ঞান সভা গঠন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ছোট ছোট উদ্যোগ ভবিষ্যতে বৃহত্তর ফল দেবে।”

পত্রিকার ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমাদের দুটি পত্রিকা—‘জনবিজ্ঞানের ইস্তেহার’ এবং ‘কিশোর বিজ্ঞানী’—বিজ্ঞান আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পত্রিকার সরবরাহ ও প্রচারে কিছু ঘাটতি রয়েছে, তবে আমরা চেষ্টা করছি এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে।”

পরিবেশ আন্দোলনের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, “দুর্গাপুর অঞ্চলে পরিবেশ দূষণ এখন একটি বড় সমস্যা। বৃক্ষচ্ছেদ, নদীর দূষণ এবং অবৈজ্ঞানিক বালি উত্তোলনের কারণে এলাকার পরিবেশ ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। আমরা মানুষকে সচেতন করতে এবং প্রশাসনের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছানোর জন্য ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়েছি। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষকে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত করা সম্ভব হবে।”



শিশু বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞান নাট্যচর্চা

জেলা সম্পাদক আরও বলেন, “শিশু বিজ্ঞান উৎসব এবং বিজ্ঞান নাটক বিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম সাংস্কৃতিক মাধ্যম। আমরা জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে বিজ্ঞান নাটক পরিবেশন ও শিশু বিজ্ঞান উৎসবের আয়োজন করেছি। গত তিন বছরে সাতটি কেন্দ্র সফলভাবে বিজ্ঞান নাট্যচর্চায় যুক্ত হয়েছে। নাটকের মাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয়ক বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছানো একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা আমরা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত করব।”

সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

কল্লোল ঘোষ বলেন, “আমাদের সংগঠন কেবলমাত্র বিজ্ঞান প্রচারে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মনোভাব গড়ে তোলার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করা আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহে আমরা রাজ্যের ডাকের প্রতি সদা সচেতন। বিভিন্ন সময়ে জেলা কমিটির উদ্যোগে তহবিল সংগ্রহ সফল হয়েছে, যা ভবিষ্যতেও সংগঠনকে চালিত করতে সাহায্য করবে।”

বক্তব্যের শেষ অংশ

তার বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠন একটি জীবন্ত আন্দোলন। এটি কেবল কর্মসূচি রূপায়ণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষের সঙ্গে জীবন্ত সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাদের বিজ্ঞানচেতনা ও সচেতনতার অংশীদার করা। সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করব এবং সংগঠনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে বৃহত্তর সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাব।”

এই সম্মেলনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলা একটি নতুন অধ্যায় শুরু করল। সংগঠনের প্রতিটি সদস্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজ্ঞান আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।


Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies