ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটের ঘোষণা: ইউক্রেনের সদস্যপদ বন্ধের টেবিলে নেই, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান
গতকাল, ১৩ মার্চ ২০২৫, ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে ওয়াশিংটনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। এই বৈঠকের পর আজ, ১৪ মার্চ, রুটে একটি উল্লেখযোগ্য ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে বর্তমানে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রদানের কোনো সম্ভাবনা আলোচনায় নেই এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই মন্তব্য ন্যাটোর নীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যা সম্ভবত ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রভাবের ফলাফল।
ট্রাম্প এবং রুটের মধ্যে বন্ধ দরজার পেছনে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে রুটের আজকের বক্তব্য থেকে এটা অনুমান করা যায় যে তিনি ট্রাম্পের হাতে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বলে মেনে নিয়েছেন। ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসছেন এবং ন্যাটোর পারস্পরিক প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। রুটের সাম্প্রতিক মন্তব্য থেকে মনে হচ্ছে, তিনি এই সংঘাতের একটি বাস্তবসম্মত সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে, যা ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক আলোচনার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ন্যাটোর কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে এই বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন যে ইউক্রেনের যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হতে পারে। অনেকের মতে, এই সংঘাতের মাধ্যমে যে অর্থ পাচারের প্রক্রিয়া চলছিল, তাও এখন বন্ধ হওয়ার পথে। রুটের এই অবস্থান গ্রহণকে অনেকে ট্রাম্পের কাছে তার পরাজয়ের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন। যদিও রুটে এখনও একজন বিতর্কিত রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত, যাকে কেউ কেউ জর্জ সোরোসের প্রভাবাধীন বলে সমালোচনা করেন, তবুও তিনি যে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন, তা তার বক্তব্যে স্পষ্ট।
ট্রাম্প এখন রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি সমঝোতার শর্ত নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটোর কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে। রুটের এই স্বীকারোক্তি—যে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ বর্তমানে সম্ভব নয়—একটি ছোট পদক্ষেপ মনে হলেও, এটি এই যুদ্ধের সমাপ্তির দিকে একটি বিশাল অগ্রগতি। এটি কেবল ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের সমাধানের পথই প্রশস্ত করছে না, বরং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গতিপথেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বৈঠকের সময় ট্রাম্প এবং রুটে প্রতিরক্ষা উৎপাদন এবং আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন, যেখানে চীন ও রাশিয়ার কার্যকলাপ বাড়ছে। ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ধারণাও উত্থাপন করেছিলেন, যদিও রুটে এটিকে ন্যাটোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে অস্বীকার করেছেন। এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায়, ট্রাম্পের প্রভাবে ন্যাটোর অভ্যন্তরীণ গতিশীলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে পরিবর্তন আসছে।
রুটের এই নতুন অবস্থান অন্যান্য ন্যাটো নেতাদের থেকে কিছুটা আলাদা। যেখানে কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনের সদস্যপদের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়ে আসছে, সেখানে রুটে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন, যা অন্যান্য নেতাদের কঠোর অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। এছাড়া, ইইউ-ন্যাটো সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তার ভূমিকাও তাকে অনন্য করে তুলেছে।
এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পের নেতৃত্ব এবং রুটের সিদ্ধান্তগুলো আগামী দিনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এটি কেবল ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি নয়, বরং ন্যাটোর ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা এবং বিশ্ব শান্তির জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।