আজকের সঞ্জীবনী: শুশ্রূষা বনাম শোষণ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নৈতিক চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আশির দশক থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। সেই সময় জুনিয়র ডাক্তারদের অন্যতম দাবি ছিল সরকারের কাছে বৈজ্ঞানিক ওষুধ নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের আহ্বান। কিন্তু যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও এই দাবি আজও অধরা।
স্বাস্থ্য খাতে সংকট ও সাধারণ মানুষের দুর্দশা
নিত্যদিন আমরা খবরের শিরোনামে জাল ও ভেজাল ওষুধের কারণে প্রাণহানির ঘটনা শুনে থাকি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, যা সাধারণ মানুষের চিকিৎসা গ্রহণের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। এই সংকটের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার জনস্বাস্থ্য মোর্চা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য আন্দোলন।
৮ই মার্চ: একটি প্রাসঙ্গিক কর্মশালা
গতকাল, ৮ই মার্চ, সূর্য সেন স্ট্রিটের ত্রিপুরা হিতসাধনী সভাঘরে জনস্বাস্থ্য মোর্চা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। এই সভায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য মোর্চার অভিজ্ঞ সদস্য এবং স্বাস্থ্য আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ডা: শর্মিষ্ঠা রায়।
ডা: রায় জেনেরিক ওষুধের প্রয়োজনীয়তা এবং এর সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসার মান বজায় রেখে খরচ কমানোর পদ্ধতি নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন যে, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা এখনও পর্যন্ত যথাযথ এবং সন্তোষজনক নয়।
মূল্যবৃদ্ধি ও মানহীন ওষুধের বিরুদ্ধে সচেতনতা
সভায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে ডা: শর্মিষ্ঠা রায় ওষুধের মান এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। আলোচনা থেকে উঠে আসে, জেনেরিক ওষুধের সঠিক প্রয়োগ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা খরচ কমাতে পারে। তবে মানহীন ওষুধের বিপজ্জনক প্রভাব এবং সরকারের অপ্রতুল নজরদারি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
কর্মশালা ও আলোচনা সভার গুরুত্ব
এই কর্মশালার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য মোর্চা সাধারণ মানুষ এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি জেনেরিক ওষুধের সঠিক ব্যবহার এবং নৈতিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচারের জন্য এই ধরনের কর্মশালা অপরিহার্য।
উপসংহার
স্বাস্থ্য একটি মৌলিক অধিকার। অথচ আজও মানুষের সেই অধিকার নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। জনস্বাস্থ্য মোর্চার এই উদ্যোগ যেমন শুশ্রূষার আদর্শকে সামনে নিয়ে আসছে, তেমনি শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস যোগাচ্ছে। স্বাস্থ্য আন্দোলন এবং বৈজ্ঞানিক ওষুধ নীতির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের সবার দায়িত্ব।