দুর্গাপুর, ২ মার্চ ২০২৫:
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পশ্চিম বর্ধমান জেলার ১৪তম জেলা সম্মেলন আজ এক বিশিষ্ট মঞ্চে পরিণত হয়, যেখানে বিজ্ঞান আন্দোলনের প্রয়াস ও সমাজ সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিজ্ঞান আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অরিন্দম কোনার।
অরিন্দম কোনারের বক্তব্য
সম্মেলনের মূল বক্তৃতায় অরিন্দম কোনার বিজ্ঞান আন্দোলনের ভূমিকা এবং দায়িত্ব নিয়ে তার মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। তিনি বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, "বিজ্ঞান মঞ্চ শুধু শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেই নয়, সমাজে ধর্মীয় উন্মাদনার বিপক্ষে লড়াই করতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।"
তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, সারা পৃথিবীতে ধর্মীয় ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে স্বৈরাচারের যে প্রবণতা দেখা দিচ্ছে, তা প্রতিরোধ করতে বিজ্ঞান মঞ্চকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।
তিনি বলেন, "ধর্মের মোড়কে যে স্বৈরাচারের চিত্র ফুটে উঠছে, তাকে মোকাবিলা করার জন্য বিজ্ঞান মঞ্চই একমাত্র শক্তিশালী মাধ্যম।"
পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ
অরিন্দম কোনার নগরায়ন এবং আধুনিক উন্নয়নের ফলে বাস্তুতন্ত্রের ওপর সৃষ্ট চাপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি পরিবেশ রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন,
"পরিবেশ রক্ষার জন্য মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। বিজ্ঞান মঞ্চের মাধ্যমে এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার রোধ করা যায়।"
বিজ্ঞান আন্দোলনের ভূমিকা
অরিন্দম কোনার আরজিকর হাসপাতালের চিকিৎসকদের অধিকার রক্ষার লড়াই এবং ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদে বিজ্ঞান মঞ্চের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিজ্ঞান মঞ্চের ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।"
সম্মেলনের মূল বার্তা
সম্মেলনে অন্যান্য বক্তারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীদের আদর্শ অনুসরণ করে সমাজ পরিবর্তনের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, বিজ্ঞান মঞ্চ শুধু বিজ্ঞানচর্চার নয়, বরং একটি সচেতন ও মননশীল সমাজ গড়ার আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করছে।
এই সম্মেলন বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ নির্মাণ এবং সামাজিক সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার এক দৃঢ় অঙ্গীকারের মঞ্চে পরিণত হয়েছে। বক্তারা মনে করেন, সম্মেলনটি রাজ্যে বিজ্ঞান আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সমাপ্তি বার্তা
অরিন্দম কোনার তার বক্তব্য শেষ করেন এই আশাবাদের মাধ্যমে যে, বিজ্ঞান আন্দোলন শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা দেশেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। "বিজ্ঞানমনস্কতা আর সচেতনতা ছড়িয়ে সমাজে যে বিভেদ রয়েছে, তা দূর করাই বিজ্ঞান মঞ্চের লক্ষ্য হওয়া উচিত,"—এই বক্তব্য দিয়ে তিনি তার বক্তৃতা শেষ করেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ১৪তম জেলা সম্মেলন রাজ্যের বিজ্ঞান আন্দোলনের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।