চেন্নাই মেইল-এর সফরে সোম্পেটা: বৌদ্ধ মন্দিরে ইতিহাসের ছোঁয়া
চেন্নাই মেইল (ট্রেন নং ১২৮৩৯/১২৮৪০)-এর সফরে সোম্পেটা স্টেশনে দুই মিনিটের বিরতি যেন এক অনন্য অভিজ্ঞতার জানালা খুলে দেয়। এই সোম্পেটা স্টেশন, অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার অন্তর্গত, বিখ্যাত একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থানের কাছাকাছি অবস্থিত।
এই অঞ্চলের বিশেষ আকর্ষণ হলো দন্তপুরি বৌদ্ধ মন্দির, যা একসময় সমগ্র কল্পনা ও ইতিহাসকে প্রাণবন্ত করে তোলে। দন্তপুরি, যা দন্ত বরাপু কোটা নামেও পরিচিত, বৌদ্ধধর্মের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে একসময় প্রতিষ্ঠিত ছিল একটি স্তূপ, যেখানে বুদ্ধের পবিত্র দন্ত (দাঁত) সংরক্ষিত ছিল। স্থানীয় রাজাদের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই মন্দির বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
দন্তপুরি শুধু ধর্মীয় কেন্দ্রই নয়, এটি ছিল কলিঙ্গ রাজ্যের রাজধানী। তৃতীয় শতাব্দীতে মহামানব সম্রাট অশোকের ধর্মান্তরের পর এই অঞ্চল বৌদ্ধধর্মের বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এখান থেকে প্রাচীন স্তূপ, চৈত্য এবং মূর্তির খোঁজ পাওয়া গেছে, যা ২য় শতাব্দী থেকে ১২শ শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের বৌদ্ধ ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।
এই অঞ্চলে আরও একটি ধর্মীয় স্থান উল্লেখযোগ্য—শ্রী সোমেশ্বর স্বামী মন্দির। এই মন্দিরটি সোম্পেটার অন্যতম প্রধান হিন্দু তীর্থস্থান এবং সেখানকার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অনন্য উদাহরণ।
চেন্নাই মেইল যখন সকাল ১১:৪৯-এ সোম্পেটা স্টেশনে পৌঁছায় এবং ১১:৫১-এ ছেড়ে যায়, তখন আপনি মাত্র দুই মিনিটেই অনুভব করতে পারেন ইতিহাস আর আধ্যাত্মিকতার মিলন। এই ট্রেনযাত্রা শুধুই গতির নয়, এটি এক অনুপ্রেরণা, যেখানে সময় আর স্থান এক হয়ে যায়।
দন্তপুরি মন্দিরের মতো ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণ কেবলমাত্র দর্শনের অভিজ্ঞতা নয়, বরং তা অতীতের সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র গড়ে তোলে। আপনার পরবর্তী সফরে সোম্পেটা এবং দন্তপুরি রাখুন তালিকায়। ইতিহাসের স্পর্শে আপনার যাত্রা হয়ে উঠুক আরও অর্থবহ।