" " //psuftoum.com/4/5191039 Live Web Directory কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম প্রয়াত, চুরুলিয়ায় শোকের ছায়া, সাংস্কৃতিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি Nazrul Islam's Nephew, Kazi Rezaul Karim, No More. //whairtoa.com/4/5181814
Type Here to Get Search Results !

কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম প্রয়াত, চুরুলিয়ায় শোকের ছায়া, সাংস্কৃতিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি Nazrul Islam's Nephew, Kazi Rezaul Karim, No More.

 

কাজী নজরুল ইসলামের ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম প্রয়াত, চুরুলিয়ায় শোকের ছায়া, সাংস্কৃতিক জগতে অপূরণীয় ক্ষতি




চুরুলিয়া, ২৯শে মার্চ, ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নজরুল চর্চার জগতে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে প্রয়াত হলেন কাজী রেজাউল করিম। শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৫ সালের সকালে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল [বয়স উল্লেখ করা যেতে পারে, যদি জানা থাকে]। তিনি ছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আপন ভ্রাতুষ্পুত্র এবং স্থানীয়ভাবে সকলের প্রিয় 'জুলুদা' নামে পরিচিত ও অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর এই আকস্মিক প্রয়াণে চুরুলিয়া গ্রাম তথা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

নজরুল পরিবারের ঐতিহ্য ও স্মৃতিবাহক:
কাজী রেজাউল করিম কেবল বিদ্রোহী কবির রক্তসম্পর্কের উত্তরাধিকারী ছিলেন না, তিনি ছিলেন চুরুলিয়ায় নজরুল স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ধারক ও বাহক। কাজী নজরুল ইসলামের জন্মভিটার খুব কাছেই তাঁর বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবি নজরুলের জীবন, সংগ্রাম এবং তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে জেনেছেন পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। এই পারিবারিক সংযোগ তাঁকে নজরুল চর্চা এবং কবির স্মৃতি সংরক্ষণে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

চুরুলিয়া নজরুল আকাদেমির কাণ্ডারী:
চুরুলিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত নজরুল আকাদেমির সঙ্গে কাজী রেজাউল করিমের সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছেদ্য। তিনি দীর্ঘকাল এই আকাদেমির সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে পালন করেছেন। তাঁর কার্যকালে নজরুল আকাদেমি শুধুমাত্র কবির জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং নজরুল গবেষণা, তাঁর সৃষ্টির প্রচার ও প্রসার এবং নতুন প্রজন্মের কাছে নজরুলকে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। চুরুলিয়াকে একটি পূর্ণাঙ্গ নজরুল তীর্থ হিসেবে গড়ে তোলার যে নিরন্তর প্রচেষ্টা, জুলুদা ছিলেন তার অন্যতম প্রধান কারিগর। তিনি আকাদেমির মাধ্যমে বহু নজরুল বিষয়ক সেমিনার, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন, যা দেশ-বিদেশের নজরুল গবেষক ও অনুরাগীদের আকৃষ্ট করত।

প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সহযোদ্ধা:
সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অনুরাগ শুধু নজরুল কেন্দ্রিক ছিল না। কাজী রেজাউল করিম ছিলেন একজন সমাজমনস্ক ও প্রগতিশীল চিন্তাধারার মানুষ। তিনি পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের একজন সক্রিয় ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্য ছিলেন। সংগঠনের অবিভক্ত বর্ধমান জেলা কমিটির এবং পরবর্তীকালে রাজ্য কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজ্যের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত মূল্যবান। লেখক ও শিল্পীদের অধিকার রক্ষা এবং মুক্তচিন্তার প্রসারে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন ও প্রভাব:
পেশাগত ও সাংগঠনিক পরিচয়ের বাইরেও কাজী রেজাউল করিম ছিলেন একজন অত্যন্ত অমায়িক, বিনয়ী এবং পরোপকারী মানুষ। 'জুলুদা' নামে তিনি পরিচিত ছিলেন এলাকার সকলের পরম সুহৃদ হিসেবে। তাঁর সরলতা, জ্ঞান, এবং নজরুল বিষয়ক গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করত। এলাকার মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে তাঁকে পাশে পাওয়া যেত। তাঁর বাড়িটি যেন চুরুলিয়ায় আসা নজরুল ভক্ত ও গবেষকদের জন্য এক আশ্রয়স্থল ছিল, যেখানে তারা কবির পরিবার এবং তাঁর জীবন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা লাভ করতে পারতেন।

শোক ও প্রতিক্রিয়া:
কাজী রেজাউল করিমের প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মহল, নজরুল অনুরাগী এবং চুরুলিয়াবাসীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাহিত্যিক, শিল্পী এবং বিভিন্ন সংগঠন তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের পক্ষ থেকেও তাঁর প্রয়াণে গভীর মর্মবেদনা জ্ঞাপন করা হয়েছে এবং তাঁর অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়েছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাঁর স্মৃতিচারণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। তাঁর চলে যাওয়াকে পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক জগতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

কাজী রেজাউল করিমের জীবন ছিল নজরুল স্মৃতি রক্ষা এবং প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চায় উৎসর্গীকৃত। নজরুল পরিবারের সদস্য হিসেবে এবং একজন একনিষ্ঠ সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। চুরুলিয়ার মাটি হারালো তার এক কৃতি সন্তানকে, নজরুল বিশ্ব হারালো এক অভিভাবককে এবং বাংলা সংস্কৃতি হারালো এক নীরব সাধককে। তাঁর স্মৃতির প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার ও অগণিত গুণগ্রাহীর প্রতি আন্তরিক সমবেদনা। 

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies