রাজ্যে চলছে 'গণতন্ত্র নিধন যজ্ঞ', কৃষক স্বার্থে নেই পরিকল্পনা: ব্রিগেডের মঞ্চ কাঁপিয়ে তোপ দাগলেন কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, ডাক দিলেন সফল করার দেশব্যাপী ধর্মঘটের
কলকাতা, ২০ এপ্রিল: কলকাতা ময়দানে বামফ্রন্টের ব্রিগেড সমাবেশের জনসমুদ্রকে সাক্ষী রেখে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন সারা ভারত কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার। রাজ্যের কৃষক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর ভাষণে উঠে এল গণতন্ত্রের সংকট, কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্যের করুণ চিত্র এবং আসন্ন দেশব্যাপী প্রতিবাদের জোরালো ডাক।
ভাষণের শুরুতেই অমল হালদার অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এক ভয়াবহ 'গণতন্ত্র নিধন যজ্ঞ' চলছে। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে এবং বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। রাজ্যের কৃষকদের অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, "একদা যে বাংলা বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ধান উৎপাদনে সমগ্র দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল, আজ তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে সেই বাংলা নেমে এসেছে পঞ্চম স্থানে। আর প্রথম স্থান দখল করেছে তেলেঙ্গানা।" তিনি প্রশ্ন তোলেন, এই অবনমনের দায় কার?
রাজ্য সরকারের কৃষি নীতির তীব্র সমালোচনা করে হালদার বলেন, "কৃষকদের উন্নতির জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর কোনও আধুনিক পরিকল্পনা এই সরকারের নেই। সেচের ব্যবস্থা, উন্নত বীজ সরবরাহ বা ফসল সংরক্ষণের কোনও সুসংহত উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। উল্টে, কৃষকদের ঋণের ফাঁদে ফেলে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।" তিনি আরও যোগ করেন, জমির স্বাভাবিক উৎপাদনশীলতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে সরকারের কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিকে 'মিথ্যার বেসাতী' বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, রাজ্যের কৃষকদের আসল দুর্দশার চিত্রটা সরকারের কথায় প্রতিফলিত হয় না।
শুধু রাজ্য নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধেও সরব হন অমল হালদার। তিনি বলেন, "দেশের বর্তমান সরকার কর্পোরেটদের স্বার্থে কাজ করছে। নতুন কৃষি আইন প্রণয়ন করে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের অধিকার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিতে চাইছে।" এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও কৃষক স্বার্থবিরোধী চক্রান্ত চলছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। তিনি জানান, আগামীকাল মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি 'ভ্যান' ভারতে আসছেন এবং তাঁর এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হল ভারতের বাজারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিজাত পণ্যের অবাধ বাণিজ্যের পথ খুলে দেওয়া, যা দেশের কৃষকদের সর্বনাশ ডেকে আনবে। এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাতে আগামীকাল সারা দেশ জুড়ে কৃষক সভা 'গো ব্যাক ভ্যান' স্লোগান তুলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে বলে তিনি ঘোষণা করেন।
আগামী দিনের বৃহত্তর লড়াইয়ের রূপরেখা তুলে ধরে অমল হালদার বলেন, "দেশকে বাঁচাতে, দেশের সম্পদ রক্ষা করতে আগামী ২০শে মে সারা দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।" এই ব্রিগেড সমাবেশ থেকে সেই ধর্মঘট সর্বাত্মক সফল করার জন্য উপস্থিত জনতাকে তিনি শপথ নিতে আহ্বান জানান।
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, "তেভাগা আন্দোলন শুধুমাত্র কৃষকদের অধিকারের লড়াই ছিল না, তা ছিল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করার সংগ্রাম। সেই আন্দোলন যেমন দাঙ্গা রুখে দিয়েছিল, আজকের এই গণআন্দোলনকেও তেমনই ভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে বাংলার বুকে মুক্তির নতুন সূর্যোদয় ঘটাতে হবে।" তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে, এই ব্রিগেড সমাবেশ শুধুমাত্র ভোটের লড়াই নয়, বরং দেশের আত্মাকে বাঁচানোর লড়াইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।