মুম্বাইতে জৈন মন্দির ভাঙা: বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে জৈন সম্প্রদায়
মুম্বাইয়ের ভিলে পার্লে পূর্বে জৈন সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের পবিত্র স্থান, একটি ৯০ বছরের পুরনো দিগম্বর জৈন মন্দির, সম্প্রতি বন্যার মতো প্রশাসনিক আদেশে ধ্বংস করে দিয়েছে ব্রিহনমুম্বাই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (বিএমসি)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জৈন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, যা বিজেপি শাসিত সরকারের বিরুদ্ধে এক নতুন আন্দোলনের সূচনা করেছে।
মন্দির ভাঙা: প্রশাসনিক তৎপরতা নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা?
বিএমসি দাবি করেছে, এই মন্দিরটি অবৈধ নির্মাণ এবং এটি রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডের জন্য সংরক্ষিত জমিতে গড়ে উঠেছিল। তবে মন্দির কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই মন্দিরটি ১৯৬২ সালের বিএমসি নিয়মাবলীর আগেই স্থাপিত এবং তাদের পক্ষে বম্বে হাইকোর্টে একটি স্থগিতাদেশের আবেদন ছিল।
"বিএমসি ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের পবিত্র স্থানটিকে ধ্বংস করেছে," বলেছেন মন্দিরের একজন ট্রাস্টি। "আমরা আদালতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম, কিন্তু প্রশাসন তা উপেক্ষা করেছে।"
বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
জৈন সম্প্রদায়ের অনেকেই এই ঘটনাকে বিজেপি সরকারের সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিহিংসাপূর্ণ আচরণের উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার বলেন, “এই সরকার সংখ্যালঘুদের উপাসনাস্থানের বিরুদ্ধে বারবার আক্রমণ করছে। জৈন সম্প্রদায়, যারা সবসময় শান্তিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন করে, তাদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়।”
প্রতিবাদের ঝড়
২০,০০০-এর বেশি মানুষ ভিলে পার্লে পূর্বে জমায়েত হয়ে মিছিল করেন, বিএমসির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মন্দির পুনর্নির্মাণের দাবি জানিয়ে। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন বিজেপি বিধায়ক পরাগ আলবানি, তবে তার অবস্থান দলীয় চাপের মুখে পড়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, এই ধ্বংসযজ্ঞের পেছনে বড় রাজনৈতিক চাপ কাজ করেছে। “বিএমসি শুধুমাত্র বিজেপি নেতাদের ইশারাতেই এমন কাজ করেছে,” বলেছেন এক প্রবীণ জৈন নেতা।
বিএমসি এবং সরকারের দ্বিচারিতা
বিএমসির একাংশকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে সমালোচকরা বলছেন এটি কেবল ক্ষোভ প্রশমিত করার একটি কৌশল। “বিজেপি সরকারের মদতে বিএমসি সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্রমাগত বৈষম্যমূলক আচরণ করছে,” বলেছেন সমাজকর্মী ইরফান শেখ।
আইনি লড়াই এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
জৈন মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বোম্বে হাইকোর্টে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে এবং মন্দির পুনর্নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করবে।
জৈন সম্প্রদায়ের এই প্রতিবাদ বিজেপি শাসিত প্রশাসনের নীতি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। এটি শুধু মুম্বাই নয়, গোটা দেশে বিজেপির সংখ্যালঘুবিরোধী অবস্থানের বিরুদ্ধে একটি বার্তা।